মাঙ্কিপক্স এখন বড় উদ্বেগের

মাঙ্কিপক্স
SCIENCE PHOTO LIBRARY: Monkeypox virus particle

সাইকোহেলথ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

বিরল অসুখ বলে এতদিন ধরে পরিচিত মানকিপক্স এবার বিশ্বব্যাপী বড় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কারণ। এ নিয়ে জোরেশোরে তদন্তে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। এ সব দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, দুর্ভল থাকছে না প্রত্যন্ত আফ্রিকায় সীমাবদ্ধ থাকা এই সংক্রামক ভাইরাস।

মাঙ্কিপক্স নিয়ে শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও। ইউরোপে এই রোগে আক্রান্ত শনাক্ত গত কয়েকদিনে একশ’ ছাড়িয়ে গেছে। মাঙ্কিপক্সের ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকলেও কেন এর প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করেই বাড়ছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

কেবল যুক্তরাজ্যেই শুক্রবার পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত শনাক্ত হয় ২০ জন। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্টেলিয়াতেও মিলেছে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব। নতুন বাস্তবতা হলো আফ্রিকা ছাড়িয়ে মাঙ্কিপক্স এখন বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

এখন পর্যন্ত যেসব দেশ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ শুক্রবার জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্সে তাঁর দেশে নতুন করে আরও ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এতে করে যুক্তরাজ্যে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায়।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগালে সন্ধান মেলে মাঙ্কিপক্সের। ডব্লিউএইচও এখন পর্যন্ত ১২টি দেশে ৮০ জনেরও বেশি আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে আরও ৫০ জন। যদিও ওই সব দেশের নাম জানায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ওয়ার্ক আউট শিখুন

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ সাধারণত মাঝারি পর্যায়ের। জ্বর, মাথা ব্যাথা, ফুলে যাওয়া, পিঠে ব্যাথা, পেশীতে ব্যাথা দিয়ে শুরু। জ্বর নেমে যাওয়ার পরপরই মুখে দেখা দেয় লাল লাল গোটা বা ফুসকুড়ি। পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ঘায়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশে এই ঘা বেশী দেখা যায়।

এই ফুসকুড়ি হতে পারে চরম চুলকানি অথবা ব্যাথাদায়ক। এটা বিভিন্ন পর্যায়ে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে পরিশেষে খোসায় রূপ নেয় এবং তা পড়েও যায়। তবে ঘায়ের ক্ষত দাগের সৃষ্টি করতে পারে।

সংক্রমণ পুরোপুরি সারতে লাগে দুই থেকে তিন সপ্তাহ।

মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়ায়

মাঙ্কিপক্স করোনাভাইরাসের মতো খুব সহজে বাতাস বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় না। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস অন্যজনের শরীরে বিস্তৃতি লাভ করে। মাঙ্কিপক্স চামড়ার কোন ক্ষত, শ্বাসনারী, চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে।

বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়ালীর মতো সংক্রমিত কোন প্রাণীর নিবিড় সংস্পর্শে গেলেও একজন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আবার ভাইরাসে সংক্রমিত কোন জিনিসের সংস্পর্শে গেলেও এই রোগ হতে পারে, যেমন- রোগীর ব্যবহৃত খাট বা কাপড়।

মানকিপক্স
ছবি: রয়টার্স

মাঙ্কিপক্স কতটা গুরুতর

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের লক্ষণগুলোকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাঝারী ধরনের বলা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই চিকেনপক্সের মতো এবং এটা নিজে থেকেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়।

তবে মাঙ্কিপক্স কখনও কখনও অনেক গুরুতর হতে পারে। এই রোগে পশ্চিম আফ্রিকায় অনেকে মারাও গেছেন।

সমকামীরা কেন বেশি ঝুঁকিতে

আগে কখনই বলা হয়নি যে, মাঙ্কিপক্স যৌনবাহিত সংক্রমণ। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনাচারের সময় ভাইরাসটি সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমকামী বা উভকামী। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে ব্রিটিশ হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি। তারা বলছে, সাম্প্রতি যেহেতু এমনটি দেখা যাচ্ছে, তাই সমকামী বা উভকামী ব্যক্তিকে সতর্ক থাকতে বিশেষভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

যাতে করে লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই সমকামী বা উভকামীরা তা গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং উদ্বেগের মনে হলে সাহায্য চাইতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে ক্লিক করুন

মাঙ্কিপক্সের সাথে বানরের সম্পর্ক কী

১৯৫৮ সালে খাঁচায় বন্দি বানরের শরীরে প্রথম এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের একটি গবেষণাগারে ওই বানর পর্যবেক্ষণে রাখা ছিল। এ কারণেই ভাইরাসটির নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স বলে।

মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবের ইতিহাস

১৯৭০ সালের পর আফ্রিকার ১০ দেশে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বিক্ষপ্তভাবে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো আফ্রিকার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। কুকুর ও অন্যান্য ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়ে মানুষের শরীরে তা সংক্রমিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে সেবার সর্বমোট ৮১ জন আক্রান্ত হয় বলে জানা গেছে। তবে কারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়নি।

২০১৭ সালে মাঙ্কিপক্সের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় নাইজেরিয়ায়। আক্রান্ত হয় ১৭২ জন। যাদের ৭৫ শতাংশই ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষ।

মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা

এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কোন চিকিৎসা নেই। তবে সংক্রমণ প্রতিরাধের মাধ্যমে এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বলা হচ্ছে, চিকেনপক্স বা স্মলপক্সের টিকাই মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

এন্টিভাইরাল ওষুধও মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে কাজের বলে জানা গেছে। তবে যুক্তরাজ্য স্মলপক্স (Small Pox) টিকার বিপুল পরিমাণ ডোজ কিনে মজুদ করেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।