সম্পাদকীয়
রাগ কী ও কেন করবেন?
রাগ মানুষের একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ আবেগ। পশুপাখির মধ্যেও রাগ নামের এ আবেগটি দেখা যায়। নিয়ন্ত্রিত রাগের ভাল দিকও রয়েছে।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই রাগ ক্ষতিকর হয়। রাগের যেমন শারীরিক অভিব্যক্তি রয়েছে, তেমনি আবার এর মানসিক প্রকাশও রয়েছে।
নানা কারণে মানুষের মাঝে রাগের সৃষ্টি হতে পারে। কখনো কখনো ব্যক্তির মনের ভেতর আবার বাইরের ঘটনার জন্যও তার রাগ হতে পারে।
সাধারণভাবে যেসব কারণে মানুষ রেগে যায়, সেগুলো হলো- ক্লান্তিবোধ, ক্ষুধা, কিছু হারিয়ে গেলে, ব্যাথা পেলে, শারীরিক বা মানসিক কষ্ট থাকলে, কাউকে কিছু না বোঝাতে পারলে, অন্যায়ের স্বীকার হলে ইত্যাদি।
যথাযথভাবে রাগ প্রকাশ ইতিবাচকও হতে পারে। রাগের যথাযথ প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল বা দক্ষতা, যা মানুষকে তার চলার পথে সাহায্য করে এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখে।
রাগের উৎস
একটু অন্যভাবে দেখলে রাগের চারটি উৎস হতে পারে। যেমন-
- ব্যক্তির সাথে এমন কিছু ঘটলে যা তার ভালো লাগে না,
- নিজস্ব কোন সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলে,
- কোন দুর্ঘটনার স্বীকার হলে এবং
- পূর্বের কষ্টদায়ক ঘটনা বারবার মনে পড়লে।
রাগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক
ইতিবাচক বিষয়: নিয়ন্ত্রিত রাগ প্রকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি তার ইতিবাচক অবস্থান ধরে রাখতে পারে।
রাগ ব্যক্তিকে বুঝতে সাহায্য করে, সে তার মনে আঘাত পাচ্ছে, যা সে পেতে চায় না। এর সাহায্যে নিজের চাহিদা ও চাওয়া বুঝতে পারে এবং প্রকাশের মাধ্যমে মনকে হালকা করতে পারে।
নেতিবাচক বিষয়: রাগ নিয়ন্ত্রণে না থাকাই রাগের নেতিবাচক দিক। রাগের সময় আমাদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, রক্ত চাপ, শরীরের তাপমাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।
অনিয়ন্ত্রিত রাগের কারণে ব্যক্তি নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে। যেমন- শরীরের পেছন দিকে ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, পেটে পীড়া, চামড়ার অসুখ, ঠাণ্ডা লাগা ও ইনফেকশনের সৃষ্টি ইত্যাদি।
অনিয়ন্ত্রিত রাগের ফলে ব্যক্তি নানা রকম মানসিক সমস্যায় পড়েন। যেমন- হতাশ লাগা, মদে বা মাদকে আসক্ত হওয়া, নিজেকে আঘাত বা ক্ষতি করা, হীনমন্যতা তৈরি, মেজাজের গোলযোগ ইত্যাদি।
রাগ প্রকাশের মাধ্যম ও লক্ষণ
সাধারণত চারভাবে আমরা রাগ প্রকাশ করে থাকি। যেমন- শারীরিক, চিন্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আবেগীয় এবং আচরণগত প্রকাশের মাধ্যমে।
শারীরিক লক্ষণ
রাগের সাধারণত যেসব শারীরিক লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো হলো-
- হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়
- শরীর কাঁপতে থাকা
- মাংসপেশীতে চাপ বেড়ে যায়
- শরীরের ভঙ্গি শক্ত হয়ে যায়
- গরম লাগে
- ঘুম আসে না
- মাথা ধরে
- হজমে সমস্যা
আবেগীয় লক্ষণ বা অনুভূতি
রাগের যেসব আবেগীয় লক্ষণ বা অনুভূতি বোঝা যায় বা দেখা যায়, সেগুলো হলো-
- বিরক্তবোধ
- কান্না আসা
- দুঃখ লাগা বা হতাশ লাগা
- হিংসা লাগা
- আতংকিত হওয়া
- অপরাধ বোধ
চিন্তন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন
রাগের যেসব চিন্তার প্রক্রিয়ার পরিবর্তন সাধারণত ব্যক্তি বুঝতে পারে বা দেখা যায়, সেগুলো হলো-
- ঠিকমত চিন্তা করতে না পারা
- নেতিবাচক দিক নিয়ে বেশী বেশী ভাবা
- খারাপ কিছুর আশংকা হতে থাকা
- অন্যকে দোষারোপ করা
- সুযোগ পেলেই অন্যের সমালোচনা করা
- অন্যকে অকারণে শত্রু মনে করা
- নিজের মনে মনে নেতিবাচক কথা বলা
আচরণগত পরিবর্তন
রাগের যেসব বাহ্যিক বা আচরণগত পরিবর্তন সাধারণত ব্যক্তি বুঝতে পারে বা দৃশ্যমান হয়, সেগুলো হলো-
- জিনিসপত্র ভাংচুর করা
- একদম চুপ থাকা
- আক্রমণাত্মক আচরণ করা, যেমন- জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা
- অন্যকে মারধর করা
- গালিগালাজ করা
- যা ঘটেছে, তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা
- এক কথা বারবার বলা
- কথা বলার বা নড়াচড়ার গতি বেড়ে যাওয়া
- চিৎকার করা
- হাত-পা বা পুরো শরীর কাঁপতে থাকা
রাগ নিয়ন্ত্রণ বা রাগের ইতিবাচক ব্যবস্থাপনা আমরা কীভাবে করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা থাকছে দ্বিতীয় পর্বে।