সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক
পবিত্র শবে কদর বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতময় রাত। ইসলাম ধর্মে এই রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের রাতে ইবাদত করলে তার চেয়েও বেশি সওয়াব মেলে।
সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সওয়াব অর্জন ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের মর্যাদা অতুলনীয়। পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শবে কদরের কেন এত ফজিলত
পবিত্র কদরের রাতে নবুয়্যত লাভ করেছিলেন শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। মক্কার জাবালে রহমত বা হেরা গুহায় তাঁর ওপর ওই রাতে নাজিল হয় সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরাআনের পাঁচ আয়াত। এর মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে অবতীর্ণ হতে শুরু করে মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
এই মহাগ্রন্থে ‘আল-কদর’ নামে একটি সুরাও রয়েছে। সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে এই রাত তাই অত্যন্ত মর্যাদার ও বরকতপূর্ণ।
শবে কদর রমজানের কোন্ রাতে
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। একে অনুসন্ধানের কথাও বলা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯।
শবে বরাত কেন ২৭ রমজানে
২৬ রমজান দিবাগত রাত বা আরবি হিসেবে ২৭ রমজানের রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে বলে অনেক মুফাসসিরিন কেরাম (কোরআন গবেষক) মত দিয়েছেন।
তাদের মতে, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দ দু’টিতে রয়েছে ৯টি হরফ বা বর্ণ। আর সুরা কদরে তা তিন তিনবার উল্লেখ রয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে বা নয়কে তিনবার যোগ করলে ২৭ হয়।
তাই সাতাশ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হয় (তাফসিরে মাজহারি)।
উল্লেখ্য যে, চাঁদের হিসেবে সূর্য ডোবার পর থেকে আরবি মাসের দিন শুরু। সেই হিসেবে ২৬ রমজানে ইফতারির মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২৭ রমজান।
শবে কদরের আমল
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪; ই. ফা.)।
নফল ইবাদতের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াতই শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য আমলের মধ্যে রয়েছে নফল নামাজ, যেমন- তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ইত্যাদি।
সৃষ্টিকর্তা দেখছেন এমন অনুভূতি রেখে সময় নিয়ে দীর্ঘ করে নামাজ পড়া উত্তম। তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ইয়াসিন, সুরা তোহা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা পড়তে পারেন।
এছাড়া দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া, তাওবা-ইস্তিগফার বা বারবার ক্ষমা চাওয়া, অন্যান্য দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার করা যেতে পারে। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ সব মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
একবার হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন’।) (ইবনে মাজা, আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ, নাসিরুদ্দিন আলবানী)।
এই রাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রহমত ও নাজাত প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।