আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেল নড়াইলের সাদাত রহমান

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার সাদাত রহমান

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছে নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান। সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করায় ‘শিশুদের নোবেল’ খ্যাত এই পুরস্কার অর্জন করে ১৭ বছরের এই কিশোর। এএফপি ও রয়টার্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগে সীমিত পরিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। যা অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাদাতের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।

কে এই সাদাত

সাদাত রহমান

সাদাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাদাত একজন ‘তরুণ চেঞ্জমেকার’ ও সমাজ সংস্কারক। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর (১৫) আত্মহত্যার পর কাজে নামে সাদাত। সে তার বন্ধুদের সহায়তায় ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করে। এই সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০১৯’-এ বিজয়ী হয়ে তহবিল পায়।

এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা জানতে পারে কীভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। বর্তমানে প্রায় ১৮শ’ কিশোর-কিশোরী এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। সাইবার টিনস অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এবং ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।

বর্তমানে সাদাত ‘সেফ ইন্টারনেট, সেফ টিনএজার’ নামের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে এবং তার বন্ধুরা ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে সেমিনার-কর্মশালা করছে। তারা প্রতিটি স্কুলে ‘ডিজিটাল স্বাক্ষরতা ক্লাব’ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

পেছনের কথা

সাদাত রহমান জানায়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে পিরোজপুরের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তাকে নাড়া দেয়। দেশে এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটছে। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এ রকম সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। কিন্তু নিজেদের সমস্যা কাউকে বলতে পারে না তারা। পুলিশ তো দূরের কথা, অনেকেই নিজের মা-বাবাকেও এ ব্যাপারে কিছু জানায় না। শেষ পর্যন্ত অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সাদাত বলছে, এ ধরনের উপলব্ধি থেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিশু-কিশোরদের সাহায্য করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সাইবার টিনসের যাত্রা শুরু গত বছর অক্টোবর মাসে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভুক্তভোগী কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগাযোগ সৃষ্টি করা হয়।

সাদাতের অভিব্যক্তি

হেগের অনুষ্ঠানে সাদাত জানায়, পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া ১ লাখ ইউরো এই প্রজেক্টে অ্যাপটির উন্নয়নে ব্যয় করার ইচ্ছা তার। আশা করছে এটি পুরো বিশ্বের জন্য একটি মডেল হবে। হেগের অনুষ্ঠানে তার পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ উপস্থাপিত হওয়ায় নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ নড়াইলের এই কিশোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই অর্জন বড় ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করে সাদাত।

সাদাত রহমানের পুরস্কার অর্জনের মুহূর্তটি দেখতে ক্লিক করুন। সাইকোহেলথ নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে এই তরুণ চেঞ্জমেকারকে অভিনন্দন।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার

২০০৫ সালে রোমে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের শীর্ষ সম্মেলন থেকে শিশুদের জন্য এই পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের একটি সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ওই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।

গত বছর সুইডেনের শিশু পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও ক্যামেরুনের ডিভিনা মালম যৌথভাবে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পান। ১৭ বছর বয়সী সাদাত রহমান নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাদাত রহমান ও তার দল সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সাদাতের সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য দু’জন হলেন মেক্সিকোর ইভান্না ওরতেজা সেরেট এবং আয়ারল্যান্ডের সিয়েনা ক্যাস্টেলন। ওই পুরস্কারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করেন।