তুলনা করা কি খারাপ?

তুলনা করা কি খারাপ
ছবি: প্রতীকী, সাইকোহেলথ নিউজ

নাঈমা জান্নাত

তুলনা বেশিরভাগ সময়ই আনফেয়ার, অর্থাৎ পক্ষপাতদুষ্ট হয়। কারণ আপনি যে ব্যক্তির সাথে যার তুলনা করছেন, দেখবেন দু’জনের পরিবেশ, পরিস্থিতি বা ব্যক্তিত্ব কিছুরই তুলনা চলে না। বাল্যকাল থেকেই আমরা তুলনা বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত। অল্প-স্বল্প তুলনা আমাদের চলার পথে কাজে লাগলেও, বেশিরভাগ সময়ই এ বিষয়টি আমাদের জীবনযাত্রাকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। তুলনার যে প্রতিযোগিতায় আপনি আচ্ছন্ন, তাতে আপনি বিজয়ী হয়েও হেরে গেছেন। কীভাবে?

তুলনার মানসিক যে উদ্ধত প্রতিযোগিতায় আপনি আচ্ছন্ন, হয়ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি জিতে যান। এতে আপনার সাময়িক আত্মিক তুষ্টি আসলেও এ অপরিপক্ক আচরণ আপনাকে আপনার সুস্থ- স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে সহায়তা করে না। বরং আপনি পরক্ষণেই আপনার সাথে তুলনা করে বসবেন এমন কারও সাথে, যার সামনে আপনি নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।

বর্তমানে এটি ভয়ানক ব্যাধির মতো বিস্তার লাভ করছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আপনি নিজের অজান্তেই এই ব্যাধিকে জিইয়ে রাখেন। বেশিরভাগ সময় এসব নিয়ে আপনাকে কেউ কিছুই বলে না। আপনি একটা দুষ্ট চক্রে আক্রান্ত হয়ে গেছেন।

এ থেকে বের হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। যেমন:

১. নিজের জীবনযাত্রার ব্যাপারে সজাগ হওয়া:

অন্যের সাথে তুলনায় না গিয়ে নিজের সফলতার চাবিকাঠি খুঁজে বের করা। চলার পথের উন্নতির জায়গাগুলো বের করে সচেতনভাবে সেটা নিয়ে কাজ করা। নিজের সাথেও নিজের তুলনা নয়, বরং উন্নতির জায়গাগুলো খোঁজার মাধ্যমে সফলতার পথ তৈরি করা। নিজের সামর্থ্য আর ইতিবাচক দিক নিয়ে চর্চা করা।

তবে, সচেতনভাবে আপনার কাজগুলো নিয়ে ও দক্ষতার সাথে কাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সফলতা বা উন্নতির জায়গা নিয়ে তুলনা করতে বাধা নেই। তবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির তুলনা আপনাকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিমজ্জিত করবে।

২. কৃতজ্ঞতার চর্চা করা:

হতে পারে সকাল সকাল আপনাকে কেউ গুড মর্নিং স্মাইল দিলো। তা মনে করেও আপনি কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন। আপনার এ ইতিবাচক চিন্তা আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করবে। নেতিবাচক আর ইতিবাচক চিন্তায় ভারসাম্য আসবে।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খপ্পরে না পড়া:

আপনি কাউকে ফলো করে নিজের সাথে তুলনায় ব্যস্ত থাকলে অতি সত্ত্বর এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যান। তা না হলে বিনোদন আর যোগাযোগের মাধ্যমই আপনার মনটাকে বিষিয়ে তুলবে। এডিটিং আর ফিল্টারিংয়ের যুগে আপনি মৌলিক কিছু পাবেন না। নিজের অশান্ত মনকে একটু দয়া করুন। যাকে আপনি অনবরত ফলো করে কষ্ট পাচ্ছেন, তাকে আনফলো করুন।

৪. শর্তহীনভাবে নিজেকে ভালোবেসে নিজ স্বত্ত্বাকে খুঁজে নিন:

আপনার অনেক গুণ আছে। কিন্তু আপনার চিন্তার জগতে তুলনার বসবাসের কারণে আপনি সে বিষয়টি উপলব্ধিতে আনতে পারছেন না। নিজের পরিচর্যার জন্য নির্ভেজাল অনুভূতির অনুসরণ করুন। কী করছি তাতে মনোযোগ দিন, কী করিনি তাতে নয়। আমরা কেউ নিখুঁত নয়। আমরা অনন্য। নিজের অজান্তেই অপরের নিন্দাকে আমরা কখন যে আপনার করে নেই, টের পাই না।

নিজের সত্য ও নির্ভেজাল অনুভূতিকে আপনার করে নিন। সত্যই সুন্দর। নিজের মনের পরিচর্যা করুন। দেখবেন ধীর ধীরে আপনি অপরের সন্তুষ্টির জন্য ক্ষতিকারক যে পরিবর্তনে মগ্ন ছিলেন, সেখান থেকে সরে এসেছেন। আপনার জীবন এখন অকৃত্রিম।

লেখক: সম্পাদক, সাইকোহেলথ নিউজ; ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, লাইফস্প্রিং লিমিটেড।