নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প

বাকি টাকা দিতে ক’বছর লাগাবে

হোজ্জা বাজারে বসেছেন আঙুর বিক্রেতা হিসেবে। এক বন্ধুকে দেখে তার কাছেই আঙুর বেচতে চাইলেন। কিন্তু, বন্ধু বললেন যে, তার কাছে টাকা নেই। হোজ্জা উদার মানুষ। বললেন, “আপনি বন্ধু মানুষ। টাকা পরে দিলেও চলবে। দুটো আঙুর মুখে দিয়ে দেখুন, মধুর মত মিষ্টি।”

বন্ধু অপারগতা জানিয়ে বললেন যে, তিনি রোজাদার। হোজ্জার জিজ্ঞাস্য, রোজার মাস আসতে এখনো দুই মাস বাকি। এখনই রোজা? বন্ধু বিগত বছরের ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করার কথা জানালেন।

সাথে সাথে হোজ্জা বললেন, “ভাই, আমি তোমার কাছে আঙুর বেচব না। যে লোক খোদার বাকি পূরণ করতে ১০ মাস লাগায়, সে আমার বাকি টাকা দিতে ক’বছর লাগাবে?”

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

কিছু না বলাই ভাল

হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভাল পোশাক ধার দিলেন।

প্রথম বাড়িতে হোজ্জা বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় এও জানালেন, “এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার।”

সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু তো মহা ক্ষ্যাপা। “কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার”? হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন।

দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, “এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এঁরই”। এবার তো বন্ধু আরো চটে গেলেন। বললেন, “পোশাকটি নিয়ে কিছু না বলাই ভাল”।

তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে তাই হোজ্জা বললেন, “ইনি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু, আর এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভাল”!

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

বিড়ালটা কোথায়?

হোজ্জা একসের মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে । গিন্নি রান্নার পর সব মাংস খেয়ে ফেললো । হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসলে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানালো, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।

হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন একসের। গিন্নিকে তখন বললেন, “এটা যদি বিড়াল হয়, তবে মাংস কোথা্য়, আর এটা যদি মাংস হয় তবে বিড়ালটা কোথায়”?

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

অভিযোগ নাই

বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। প্রিয় গাধার এই দূরাবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করে, “হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল, যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে”।

পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পড়ে আছে। প্রাণপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “কোন অভিযোগ করব না খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলা না!”

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

বিবি তোমার কথাই ঠিক

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হলে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।

এইবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল’। হোজ্জা বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি তোমার বক্তব্য বল’। আসামির বক্তব্যও মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।

হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক, নতুবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’।

হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

কোর্তার ভিতর আমিও ছিলাম

একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশী শুনতে পেলো হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর তুমুল ঝগড়া চলছে। কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো। তারপর সব চুপচাপ।

পরদিন সকালে প্রতিবেশী হোজ্জাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম’।

‘আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়’, হোজ্জা জানায়।

‘একটা কোর্তা পড়ায় এত জোর শব্দ হয়!,’ প্রতিবেশী অবাক।

‘আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন

আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?

একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। তার শালা এসে জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’

‘কেন জিজ্ঞাস করছ’, নাসিরুদ্দিন বলে।

‘আমি ভাবছিলাম, আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’।

‘ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। এখন আমাকে একা থাকতে দেও’।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন