গৃহহীনদের আজ বাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঘর পাচ্ছে ভূমিহীনরা

সাইকোহেলথ নিউজ, কিশোরগঞ্জ থেকে

মুজিববর্ষে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরই অংশ হিসেবে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারের প্রত্যেককে দুই শতক খাস জমির মালিকানাসহ একটি করে ঘর উপহার হিসেবে দেওয়া হবে আজ।

এর মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি একক ঘর ও ৩,৭১৫টি ব্যারাক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

আশ্রয়ন প্রকল্প-১ এর আওতায় এর আগে ২০ হাজার ৫২টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়।

এবার যুক্ত হচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় আবাসন ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একসঙ্গে অল্প সময়ে এত গৃহহীনের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দৃষ্টান্ত বিশ্বে নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নির্মাণ করা হয়েছে ২৫টি ঘর।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এগুলো পাচ্ছেন ২৫টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার। ইট সিমেন্টের শক্ত কাঠামো। অফহোয়াইট দেয়াল। উপরে নীল রংয়ের টিনের ছাউনী।

প্রতিটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে দুই শতক জমির ওপর। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।

ভূমিহীনদের ঘরের পাশাপাশি দুই শতক জমির মালিকানাও দেয়া হচ্ছে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে রয়েছে একটি লম্বা বারান্দা। পেছন দিকে রান্না ঘর। রয়েছে গোসলখানা ও একটি পায়খানা।

প্রত্যেক বাড়িতে দেয়া হচ্ছে আর্সেনিকমুক্ত একটি করে টিউবওয়েল। দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগও। দুটো বাড়ির মাঝখানে প্রশস্ত জায়গা ছাড়া হয়েছে।

স্বাধীনতা লাভের পর অতি সাধারণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো এতদিন স্বপ্ন দেখে এসেছে, একদিন তাদেরও ছোট্ট একটা ঘর হবে।

তবে সেই স্বপ্ন এত দ্রুত বাস্তবে পরিণত হবে, তা কল্পনাতেও ছিল না অনেকের।

প্রকল্পের ১১ নম্বর ঘর পাচ্ছেন নূরেসা বেগম। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি।

দুই মেয়ে আর তাকে ফেলে অনেকদিন আগেই চলে গেছে ভিটেমাটিহীন স্বামী।

পরে জানা গেছে, সে আরেকটা বিয়ে করেছে। দীর্ঘদিন পরিবারের কোন খোঁজ নেয়নি।

নূরেসা পাটুলিতে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিতা। বাড়ি বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছেন।

বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন ধারদেনা করে। ছোট মেয়ে শিপার বয়স ১৫।

সে বাবাকে দেখেনি অনেক দিন। তবে মন বেশী খারাপ লাগে মায়ের কষ্ট দেখে।

পঞ্চম শ্রেণীর পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। মা পরের বাড়ি কাজ করে আর মেয়ে সংসার সামলায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ ঘর পেয়ে অনেকটাই চিন্তামুক্ত নূরেসা বেগম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করে বললেন, “আল্লাহ যেন তারে অনেক দিন বাঁচায়ে রাখে।”

বৃদ্ধা সারজান খাতুন। বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে।

স্বামীহীন ভিটেমাটিহীন এই প্রৌঢ়ার ঠাঁই হচ্ছে ২৪ নম্বর ঘরে। একটা ছেলে ইটখোলায় কাজ করে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরও ১ লাখ গৃহের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের ঘর করে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে পরের বছরই একটি প্রকল্প চালু করেন তিনি, নাম দিয়েছিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্প।

১৯৯৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৮টি ভূমিহীন গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।