সাইকোহেল্থ নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থবহ কৌশল উদ্ভাবনসহ তার পেশকৃত পাঁচদফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সম্মিলিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কোভিট-১৯ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল আঞ্চলিক কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) ‘দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাস এবং অর্থনীতিতে এ সংক্রান্ত প্রভাব মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সম্মেলনে ‘কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ’ বিষয়ে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব সম্ভবত বিগত একশ’ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় সংকটের মুখোমুখি, কাজেই আমাদের সম্মিলিতভাবেই এই সংকট মোকাবেলা করা প্রয়োজন। আমাদের প্রতিটি সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব এবং অংশীদারিত্বের জন্য একটি পদ্ধতির প্রয়োজন। তিনি ভাষণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রায় করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। ডব্লিউইএফ প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ডে সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন।
পাঁচ দফা সুপারিশে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত, বর্তমান সঙ্কটে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য আর দারিদ্র্য দ্রুত বাড়তে থাকবে। গত এক দশকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেককে দারিদ্রসীমা থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছিল। তাদের অনেকেই হয়ত আবার দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। সুতরাং বিশ্বকে এখন মানব কল্যাণ, বৈষম্য দূরীকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বকে কোভিড পূর্ব অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।
দ্বিতীয় সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় জি সেভেন, জি টোয়েন্টি এবং ওইসিডির মত জোটগুলোর দিক থেকে দৃঢ ও পরিকল্পিত নেতৃত্ব এখন বিশ্বের প্রয়োজন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকির বিষয়টি ২০২০ সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত করায় ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান ক্লাউস শোয়াবের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সুতরাং ফোরাম এবং জাতিসংঘের এখন উচিত সকল রাষ্ট্র এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নীতিনির্ধারণী আলোচনার সূত্রপাত করা। এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগে আমি আনন্দের সঙ্গে যোগ দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য, উৎপাদন ও কর্মপদ্ধতিতে রূপান্তরের ধারা দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ সঙ্কট পরবর্তী সময়ে পৃথিবী হয়ত আরও নতুন নিয়ম, নতুন রীতি আর নতুন মানদণ্ড পাবে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এখন যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না। তাই আমাদেরকে এমন কৌশল ও বাস্তবমুখী সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিতে, যেন বাংলাদেশের মত দেশগুলো টিকে থাকতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী কর্মীদেরও যে অত্যন্ত কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে, সে কথাও সম্মেলনে মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
চতুর্থ সুপারিশে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং, আমাদের একটি অর্থবহ বৈশ্বিক কৌশল ঠিক করতে হবে, যাতে সম্মিলিতভাবে এ সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। মহামারীর এই সময়ে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কার্যকরিভাবে বেশ কিছু ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য বৈশ্বিক অঙ্গনেও আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরকম উদ্ভাবনী ব্যবস্থা নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মহামারীর কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে এখন সরবরাহ ও চাহিদা- দুই দিকেই সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন খাতের জন্য ১১.৬০ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন, সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় হবে।
এই সহায়তা প্যাকেজের আকার বাংলাদেশের জিডিপির ৩.৫% এর সমান। এখন পর্যন্ত আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। তবে সঙ্কট প্রলম্বিত হলে সবার জন্যই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য। সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় বাংলাদেশের কৃষিখাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য কৃষিতে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা প্রায় ৫ কোটি মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেব। ৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ইতোমধ্যে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে, সরকারের সার্বিক পরিকল্পনাতেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মহামারী কতদিন চলবে তা আমরা জানি না। এটা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতি, ব্যবসা আর সমাজকে আমাদের স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের পাশে থেকে তাদের ভয় এবং শঙ্কা দূর করতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।