খোরশেদ আলম
বেশিরভাগ শিশুর কাছে সব থেকে বেশি আনন্দের বিষয় টিভি দেখা, গেইম খেলা বা ইন্টারনেটে পদচারণা। এটি একটি চমৎকার দক্ষতা ভেবে বা এর মাধ্যমে সন্তান ঘরে বসে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে বলে অভিভাকেরাও খুশি। অনেক শিশু এর মাধ্যমে অনেক ছড়া ও গান শিখে থাকে বলে অভিভাবকেরা খুব স্বাচ্ছন্দে এগুলো ব্যবহারের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলেন। দিনে দিনে এতে তার সন্তান কবে যে এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে অবিভাবক বুঝতেই পারেন না।
অভিভাবকের চোখে স্বাভাবিক আচরণ মনে হয়ে বেড়ে উঠা এই শিশুরা যখন প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়, তখন থেকে অনেক অভিভাবক দেখতে পান যে – তাদের সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কম বা ধীরে ধীরে তা কমে যাচ্ছে, অতিরিক্ত জিদ, অস্থিরমনা হয়ে যাচ্ছে, পড়তে বসলে কারো মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে বা বিদ্যালয়ে গিয়ে কারো সাথে মিশতে পারছে না সহ প্রভৃতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ।
এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য ছুটে বেড়ান বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে। অথচ তারা বুঝতেই চেষ্টা করেন না হয়তো তাদের সন্তানের এমন আচরণের পিছনে অন্যতম নিয়ামক হয়ে কাজ করছে ঐ নিয়ন্ত্রণবিহীন টিভি/গেইম/ইন্টারনেটের আসক্তিগত আচরণ।
শুধু কি তাই– টিভি/গেইম/ইন্টারনেট আসক্তির কারণে শিশুদের কত ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে একটু চোখ বুলিয়ে নিলেই আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। আর যদি দেখেন লক্ষণ মিলে আপনার সন্তানের সাথে – চাইছেন এর থেকে উত্তোরণ, তবে তাও দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে।
অতিরিক্ত টিভি/গেইম/ইন্টারনেট আসক্তির ফলাফল
১৷ টিভি/গেইম/ইন্টারনেট দেখার সময় আশেপাশের কারো দিকে মনোযোগ দিতে হয় না। এতে করে শিশু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন কমিয়ে দেয়। এক সময়ে এই অতিরিক্ত ভিডিও গেইম খেলা, টিভি বা ইন্টারনেট আসক্তি শিশুদের নেশায় পরিণত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ ধরে রাখার আগ্রহ কমতে শুরু করে।
২৷ মস্তিষ্ক উন্নয়নের উপযুক্ত সময় এই শিশুকাল। টিভি/ইন্টারনেট এবং ভিডিও গেইম খেলার সময় তাদের কল্পনা/চিন্তা করতে হয় খুব কম বা খুব বেশি যুক্তি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করতে হয় না এবং সমস্যার সমাধানে ভিন্নতা থাকে না। তারা শুধু দেখে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে আবদ্ধ থেকে এগিয়ে যায়। এতে তাদের চিন্তা ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় ও সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হতে শুরু করে।
৩৷ শিশুর শারীরিক খেলাধুলার সময় কেড়ে নেয়। এতে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া বিছানায় শুয়ে বা আধশোয়া হয়ে টিভি/গেইম/ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে হতে পারে ঘাড় ও মেরুদন্ডের নানা সমস্যা।
৪৷ টিভি/গেইম/ইন্টারনেট দেখার সময় আমাদের সামনে দ্রুত বদলে যায় ছবি এবং আওয়াজ। যে কারণে বাচ্চাদের নিউরোলজিক্যাল সিস্টেমে মারাত্মক কু-প্রভাব পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমমতা হ্রাস পায়।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগীয় একজন প্রফেসরের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, একটি শিশুর এক ঘণ্টা টিভি দেখার দরুন তার ১০ শতাংশ সচেতনতা ও মনোযোগের দক্ষতা কমে যায়। যার ফলে সে পড়ার পরে তা ভুলে যেতে পারে অতিদ্রুত। তাছাড়া এটি শিশুকে সাধারণত পড়ার প্রতি অনীহা ও বইয়ের প্রতি তার অনুরাগ কমিয়ে ফেলে। এটা তাকে এমন এক অলস চিন্তাশীল বানায় যাতে সে সহজেই বিরক্ত হয়।
৫৷ সহিংস নাটক ও হত্যার দৃশ্যপট শিশুর মাঝে ভয়, আতঙ্ক ও ভয়ানক দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করে। তারা মনে করে যে, এ পৃথিবী খুব ভয়ঙ্কর ও তার সাথে খারাপ কিছু হবে। বিশেষ করে যেসব শিশু দুই থেকে সাত বছরের, তাদের ওপর এর প্রভাব বেশি। এর ফলে তারা অনেক সময় রাতে হঠাৎ করে কান্না করতে শুরু করে, দিনে আশেপাশের মানুষদের ভয় পেয়ে কথা বলতে চায় না, বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পায়, মা/বাবাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতে চায় না প্রভৃতি আচরণগত সমস্যা তাদের মধ্যে তৈরি হয়।
আবার কিছু শিশু এসব দৃশ্যপট বা দুরন্তপনা আচরণ তাকে হিরো ও সুখী করবে ভেবে সে তার আপনজনের সঙ্গে ওই সকল চরিত্রের অভিনয় করতে শুরু করে। কিন্তু আশেপাশের পরিচিত জনেরা তার ইচ্ছেনুযায়ী সহযোগী হতে পারে না। এর ফলে তার চরিত্রে ধীরে ধীরে বদল আসতে শুরু করে এবং সকলের প্রতি বিরক্ত, রাগ বেড়ে যাওয়া, হিংসা প্রভৃতি চারিত্রিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে।
University of Otago পরিচালিত ১০০০ শিশুর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রতি ১ ঘন্টায় টিভি দেখা – তাদের পরবর্তী জীবনে রাগী স্বভাব, সমাজ ও আইন বিরোধী কাজে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% বাড়িয়ে দেয়। (সূত্রঃ US Journal Pediatrics 2013, author email: bob.hancox@otago.ac.nz)
৬৷ বহুক্ষণ ধরে টিভি/গেইম/ইন্টারনেট দেখলে পেশির সঞ্চালন কমে যায়। এমন শিশুরা শারীরিক পরিশ্রমে বেশিরভাগ সময়ে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। ফলে মেদ/ওজন বাড়তে থাকে।
৭৷ টেলিভিশন, মোবাইল বা কম্পিউটারে মনোযোগ দেয়া ও একই সাথে খাদ্যগ্রহণ কালে তার মনোযোগ স্ক্রীণের দিকে থাকায় সে খাবারের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না এবং ঠিক মতো চিবিয়ে না খাওয়ায় হজমে সমস্যা এবং হজম ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। এর ফলে খাবারের প্রতি অনীহা ও কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
৮৷ বেশিক্ষণ টিভি/ইন্টারনেট/গেইম দেখার সময় চোখের পলক কম পড়ে। এতে চোখের রেটিনার উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। ফলে চোখের পানি শুকিয়ে যায় (Dry Eye Syndrome) এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, যেসব শিশু অন্ধকারে বসে এগুলো দেখে তাদের চোখের ক্ষতি হয় আরো বেশি।
অনেক সময় মাথা ব্যথা দেখা দেয়। চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, The Harvard School of Public Health (HSPH) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে ২ ঘন্টার বেশি টিভি দেখে, টাইপ-২ ডায়েবেটিকস, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমাসহ নানা ধরনের হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। (সূত্রঃ June 15, 2011, The Journal of the American Medical Association)
৯৷ টিভিতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখার সময়ে তা অনুকরণ করার জন্যে শিশুদের মধ্যে এক ধরনের তাড়নার সৃষ্টি হতে পারে যা অপরাধতত্ত্ববিদদের ভাষায় যাকে ‘Copycat phenomenon’ বলে। এই ‘copycat’-এ আক্রান্ত শিশুরা জীবনের যে কোন সময়ে ধূমপান, মধ্যপান, মাদক গ্রহণ, খুন, ধর্ষণসহ যেকোন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে কোন কারণ ছাড়াই।
১০৷ শিশু টিভি, ডিশ বা ইন্টারনেট দেখার দরুন অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফির মতো উপাদান দেখারও প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া অনেক পরিবার তাদের শিশুদের নিয়ে টিভির সামনে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে এমন সকল সিনেমা, নাটক বা অনুষ্ঠান দেখে, যার বেশির ভাগ পরিবার বা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। ফলে শিশুরা পরিবার ও সমাজ সম্পর্কে অবিশ্বাস ও মানুষ মাত্র প্রতিশোধ পরায়ণ প্রভৃতি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বড় হতে থাকে।
১১৷ প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখা, বিশেষভাবে খাদ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেখার মধ্যে শিশুদের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারা টিভিতে যা দেখে তা দোকানে গিয়ে খুঁজে বেড়ায় এবং এগুলোকে তারা সর্বোত্তম ভাবে। অথচ এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- চিপস বা এমন খাবার, যাতে প্রচুর চর্বি, চিনি বা উচ্চমাত্রার ক্যালরি রয়েছে। খাদ্যে মেশানো ওই সব উপাদানের কারণে শিশুদের অস্থির, দ্রুত মেজাজী হওয়া, অতিমোটা বা স্থূল করে তুলে।
১২৷ বেশি সময় টিভি/ মোবাইল/ কম্পিউটার প্রভৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার থেকে বেরুনো আলো মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে ঘুম আসতে চায় না। বিশেষ করে রাতে টিভি দেখার কারণে অনিয়মিত ঘুম চক্রের মধ্যে পড়ে যায় শিশুরা।
১৩৷ ভিডিও গেইমের আসক্তি অতিরিক্ত হয়ে গেলে একসময় তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শিশুরা সারাক্ষণ নতুন নতুন ভিডিও গেইম এবং তার ভার্সনের কথা চিন্তা করতে থাকে। এক পর্যায়ে এটি মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
টিভি/ইন্টারনেটের সঠিক উপায়ে ব্যবহার
শিশুদের বয়সোপযোগী অনুষ্ঠান প্রদর্শনের মাধ্যমে শিশুদের কিছু ক্ষেত্রে বিকাশ সাধন সম্ভব। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে হতে পারে – শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখানো (আর্ট ও ক্রাফটিং, বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ক অনুষ্ঠান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি-এর মত প্রাণী পরিচিতি মূলত চ্যানেল, দৈনিক সংবাদ, শিক্ষামূলক কার্টুন, খেলার ও ছোটদের প্রেরণাপ্রদানমূলক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। এ অনুষ্ঠানগুলো দেখানোর ক্ষেত্রে – তা কিভাবে দেখানো যেতে পারে; এমন কিছু নিয়ম অনুসরন করা যেতে পারে যা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
১৷ যদি শিশু দুই বছরের কম বয়সী হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই টিভি দেখানো থেকে বিরত রাখবেন।
২৷ শিশু যে কক্ষে ঘুমায় সে কক্ষে টিভি রাখা থেকে বিরত থাকুন। কেননা – যেসব শিশুর কক্ষে টিভি থাকে, তাদের টিভি দেখার প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। এতে তার নিঃসঙ্গতা যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে শেয়ার করার অভ্যাস। তা ছাড়া সে কী দেখছে না দেখছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই করা যাবে না।
৩৷ কখনো শিশুদের একা একা টিভি দেখতে দিবেন না। এতে নীতিহীন, সহিংস ও যৌন বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখার ঝুঁকি তৈরি হয়।
৪৷ শিশুদের সঙ্গে নিয়ে টিভি দেখার অভ্যাস সব থেকে উত্তম। এতে অভিভাবকেরা ভাল ও মন্দ অনুষ্ঠান এবং এর ভাল ও মন্দ দিক সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে পারেন; বিজ্ঞাপন চলাকালে (টিভির সাউন্ড ‘মিউট’ করে) যে অনুষ্ঠানটি দেখছিলেন, সেটির শিক্ষণীয় দিকটি নিয়ে আলোচনা করুন।
যদি অনুষ্ঠানটিতে কাল্পনিক ও অযুক্তিক কোন বিষয় থাকে তাহলে কাল্পনিক আর বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্যটুকু ধরিয়ে দিন। যদি টিভি দেখার সময় আপনার কাছে মনে হয়, অনুষ্ঠানটি আপনার শিশুর জন্যে বয়সোপযোগী নয়; গল্পাচ্ছলে চ্যানেলটি পরিবর্তন/ বন্ধ করে দিন।
৫৷ শিশুকে রুটিনের নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী টিভি/ গেইম/ ইন্টারনেটের দেখার অনুমতি দিন এবং এটা যেন সারা দিনে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টার বেশি না হয়। তাছাড়া এটাও যেন টিভি দেখার ওই সময়ানুযায়ী হয়, যে সময় মা-বাবা সময় দিতে পারবেন।
৬৷ আপনার শিশুকে টিভি/ গেইম/ ইন্টারনেটের কম দেখার উপকারগুলো উপমা বা গল্পাচ্ছলে বলে টিভি দেখার প্রতি নিরুৎসাহিত করতে পারেন।
৭৷ টিভি/ গেইম/ ইন্টারনেটের বিকল্প উপস্থাপন করে আপনার শিশুর সময়কে অংশগ্রহণমূলক সময়ে পরিণত করুন । যেমন- খেলাধুলা, শখের কাজ করা, ক্রাফটিং প্রভৃতি। তাকে এমন কিছু শারীরিক ও গঠনমূলক কর্মকান্ডে জড়িত করতে পারেন যা আপনার শিশুর জন্যে উপকার হবে। যেমন- সাইকেল চালানো, আবৃত্তি, নাচ, গান, অঙ্কন, কারাতে দো, সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রভৃতি।
৮৷ টিভি দেখার সময় খাবার খাওয়া ও খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন।
৯৷আপনার শিশুকে টিভি দেখার অনুমতি দেওয়ার আগে অনুষ্ঠানের বিষয়সূচি শিশুর উপযোগী কিনা যাচাই করে নিন।
১০৷ ঐ সব কার্টুন বা অনুষ্ঠান দেখানো এড়িয়ে চলুন, যেগুলোর মধ্যে নায়কদের মিথ্যা বলার প্রবণতা, পড়াশুনায় ফাঁকিবাজি, সহিংসতা ও হিংস্রতা রয়েছে। এ ধরনের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে টম অ্যান্ড জেরি, নিনজা হাতুড়ী, ডরিমন, ক্রাইম পেট্রোল, সি.আই.ডি. প্রভৃতি। দুর্ভাগ্যক্রমে এর প্রদর্শন এখন খুব জনপ্রিয়।
১১৷ আপনার শিশুকে (H.W.) বাড়ির কাজ ও গৃহস্থালির কাজকর্ম সম্পাদনের পরেই টিভি দেখার অনুমতি প্রদান করবেন।
১২৷ রিমোটের কন্ট্রোল আপনার শিশুর হাতে না দিয়ে আপনার কাছে রাখুন।
১৩৷ সপ্তাহে একদিন শিশুকে টিভি দেখা থেকে বিরত রাখুন।
১৪৷ রুটিনে পড়াতে বসার সময়ের আগে টিভি দেখতে দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৫৷ শিশুকে টিভি থেকে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে সাত ফুট দূরে বসিয়ে টিভি দেখানোর পরিবেশ গড়ে তুলুন। টিভি যত বড় হবে, তা থেকে বসার বন্দোবস্ত তত দূরে হবে।
১৬৷ বাচ্চাদের টিভি দেখার অভ্যাসের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
পরিশেষে পুনরায় মনে করিয়ে দিতে হয় যে, টিভি/ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেখাতে গিয়ে তা অতিরিক্ত আসক্তি পর্যায়ের চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই আমাদের সকল সময়ে জানা থাকা প্রয়োজন যে, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাই আপনাকে আগে অতিরিক্ত টিভি/ইন্টারনেট দেখা কমাতে হবে এবং যে সময়ে আপনার সন্তান পড়ছে – সে সময়ে আপনি টিভি দেখা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
লেখকঃ মোঃ খোরশেদ আলম, শিশু মনোবিজ্ঞানী (শিশু বিকাশ কেন্দ্র), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল