মোঃ বেলাল উদ্দিন
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের যোগ্যতা
- পেশাদার ও অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স ন্যুনতম যথাক্রমে ২০ এবং ১৮ হতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী বা সমমান।
- পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি ও মৃগী রোগী, বধির, রাতকানা, হৃদরোগী, বর্ণান্ধ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে
- কোন ব্যক্তির হালকা মোটরযানের লাইসেন্স পাওয়ার তিন বছর পার হলেই কেবল তিনি ভারী যানবাহনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা (লার্নার কার্ড) গ্রহণ।
- আবেদনকারীর স্থায়ী অথবা বর্তমান ঠিকানা বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভুক্ত; সেই সার্কেল অফিসে প্রথমেই লার্নার কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়।
- আবেদন পাওয়ার পর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এর যথার্থতা বিবেচনা করে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়, যার মেয়াদ তিন মাস।
শিক্ষানবিশ (লার্নার) কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ।
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ কিংবা পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাকৃত ফি’র রশিদ। (অপেশাদার -৩৪৫/-টাকা ও পেশাদার -৫১৮/-টাকা)।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা পদ্ধতি
লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে মোট ৩টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়, সেগুলো হলো-
- লিখিত
- মৌখিক ও
- ব্যবহারিক পরীক্ষা
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থী যে শ্রেণীর মোটরযানের জন্য আবেদন করেছেন সে শ্রেণীর গাড়ি নিয়ে বিআরটিএ অফিসের নির্ধারিত স্থানে (জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে) ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
উপরোক্ত সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনকারীকে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ব্যাংক ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করে বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) প্রদান করতে হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ১। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ।
- ২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ৩। জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ কিংবা পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- ৪। বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাকৃত ফি’র রশিদ (অপেশাদার -২৫৪৩/-টাকা ও পেশাদার -১৬৭৯/-টাকা)।
- ৫। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স/তদন্ত প্রতিবেদন (শুধুমাত্র পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রযোজ্য।)
- ৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ বছর এবং পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ৫ বছর পরপর নবায়নযোগ্য করতে হয়। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অথবা নবায়ন করা আবশ্যক তাদের ক্ষেত্রে করনীয়-
এই ক্ষেত্রে অপেশাদার লাইসেন্সধারী হলে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। আর পেশাদার লাইসেন্সধারীর ক্ষেত্রে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্রগুলো সঠিক পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিকস গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সটি প্রস্তুত হলে গ্রাহককে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি
- ক. অপেশাদারঃ মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ।
- খ. পেশাদারঃ মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ।
লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ১। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ।
- ২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ৩। জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ কিংবা পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- ৪। বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাকৃত ফি’র রশিদ।
- ৫। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স/তদন্ত প্রতিবেদন (শুধুমাত্র পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রযোজ্য।)
- ৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
ডুপ্লিকেট লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
আপনার মূল্যবান ড্রাইভিং লাইসেন্সটি হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হলে পূনরায় ডুপ্লিকেট লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, সেই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সহ সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
- ১। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ।
- ২। থানায় ইস্যুকৃত সাধারণ ডাইরি’র (জিডি)।
- ৩। ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স (এই মর্মে যে আপনার ব্যবহৃত গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই)।
- ৪। বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাকৃত ফি’র রশিদ।
- ৪। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স
যাদের বাংলাদেশের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তারাই কেবল আন্তর্জাতিক লাইসেন্সের জন্য চেয়্যারম্যান, অটোমোবাইলস অ্যাসোসিয়েশন, ৩/বি আউটার সার্কুলার রোড, মগবাজার, ঢাকা থেকে ১,২৫০/- টাকা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন ফরমের সঙ্গে পাসপোর্টের ফটোকপি, তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি জমা দিতে হয়। এরপর অটোমোবাইলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের যৌথ স্বাক্ষরে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট ইস্যু করা হয়।
এসএমএস এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য জানা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বায়োমেট্রিকস সম্পন্ন করার পর বিআরটিএ কর্তৃক গ্রাহককে যে এ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দেওয়া হয় তাতে একটা রেফারেন্স নাম্বার দেয়া থাকে, পরবর্তীতে এই রেফারেন্স নাম্বারটি ব্যবহার করে এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত কিনা সেটা জানতে পারবেন।
উদাহরণ: ধরুন, আপনার এ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপের রেফারেন্স নাম্বারটি DM-654286, তাহলে আপনি মোবাইলের মেসেজ অপশনে এইভাবে লিখুনঃ
DL DM654286
এরপর মেসেজটি 26969 এ পাঠিয়ে দিন।
ফিরতি মেসেজে আপনার লাইসেন্স প্রস্তুতের বর্তমান অবস্থা এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স রাইটার, ইমেইল-info@nakshitech.com