বাসস
আগামী আগস্ট মাস হতে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খালের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) এর উদ্যোগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক ‘ডুরা সংলাপ’ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাদসিক মেয়র বলেন, আমরা যে খালগুলো ওয়াসার কাছ থেকে পেয়েছি তার মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চারটি খাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকে আমাদের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, একইসাথে আপনারা জানেন, খালগুলোর পাওয়ার পর হতেই ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি হতে আমরা প্রাথমিকভাবে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করি। আমরা লক্ষ্য করি, শ্যামপুর খালের একটি অংশ ১০০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা।
কিন্তু সেখানে আমরা পেয়েছি ৮ ফুটের একটি নালা। এরকম চিত্র কিন্তু প্রায় সব জায়গায়।
এখন আমরা এই প্রকল্পের আওতায় সিএস, আরএস, এসএ নকশা, বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং পানি আইন অনুযায়ী এই ৪ খালের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্তি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।
মেয়র বলেন, আগামী মাস থেকে ব্যাপকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এ কাজে অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব খাল কঠোরভাবে দখলমুক্ত করব। তিনি আরো বলেন, এ কাজ সমাধান করতে অনেক চাপ, প্রভাব রয়েছে।
সেই চাপ, প্রভাব, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় আমি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকাবাসীর সোচ্চার ভূমিকা ও সহযোগিতা কামনা করছি।
আপনাদের সকলের সহযোগিতায় চূড়ান্তভাবে খালের সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি সকল অবৈধ দখলদারদের কবল হতে খালগুলো মুক্ত করব।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বিগত ৪ বছরে গৃহিত ও বাস্তবায়িত নানা উদ্যোগ তুলে ধরে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর যেসব জায়গায় আধাঘন্টার বেশি বৃষ্টির পানি জমা থাকে সেসব জায়গা ও স্থানকে জলাবদ্ধ বলে আমরা চিহ্নিত করছি।
২০২০ সালের পর হতে আমরা এ রকম ১৬১টি জায়গা-স্থান চিহ্নিত করেছি এবং ইতোমধ্যে ১৩৬টি জায়গা ও স্থানে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে করে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী জায়গাগুলোতে কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও, এবার ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ও গতবছর নতুন কিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে। এরকম আরো ৫০টি জায়গা আমরা চিহ্নিত করেছি।
এর মধ্যে নিউমার্কেট এলাকা, নায়েম সড়ক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনে গতবছর নতুন করে জলাবদ্ধতা পেয়েছি। সেটি যখন আমরা তদন্ত করে কারণ উদঘাটন করলাম, তখন দেখা গেল – একে তো নর্দমাগুলো পুঞ্জিভূত ময়লা জমে ভরে গেছে।
দ্বিতীয় কারণ হলো, ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অবকাঠামো ও নর্দমা অন্তর্জাল ছিল পিলখানার ভেতর দিয়ে।
২০০৯ সালের ঘটনার পরে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেসব নর্দমার মুখগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা দীর্ঘদিন তাদের (বিজিবি) সাথে দেনদরবার করেছি। পরে,আমরা বিজিবি’র অনাপত্তি পেয়েছি।
এখন পিলখানার ভেতর দিয়ে বড় নর্দমা করার এবং বিকল্প হিসেবে আজিমপুর কবরস্থানে পাশ দিয়ে নর্দমা তৈরি করে তা বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। সেটির দরপত্র প্রায় শেষ। শিগগিরই এ কাজ শুরু করতে পারব।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বিগত দিনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার নানা অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে এবং সেসব অসঙ্গতি নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
অনুষ্ঠানে খাল বেদখলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
এতে অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ, সংরক্ষিত আসনের নারগীস মাহতাব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।