সাইকোহেলথ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
ইয়েমেনের রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। হামলার সময় ওই বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও’র প্রধান তেদরস আধানম গেব্রেয়াসুস। অল্পের জন্য রেহাই পেয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেনে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান। ঠিক এমন সময় সেখানে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ডব্লিউএইচওপ্রধান নিজেই এক পোস্টে জানান, ইসরায়েলের হামলায় তাঁর উড়োজাহাজের একজন ক্রু সদস্য আহত হয়েছেন। তবে বিমানবন্দরে অবস্থান করা জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্যরা নিরাপদে আছেন। তবে হামলার কারণে যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে।
হামলার বর্ণনা দিয়ে তেদরস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজে যখন তারা উঠতে যাবেন, ঠিক সেই সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার, রানওয়েসহ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা এখন ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। ইসরায়েলে তাদের হামলা চালানোর একদিন পরই পাল্টা এই হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ। হুথি নিয়ন্ত্রিত সাবা নিউজ তিনজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানায়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, হামলার লক্ষ্য ছিল হুথিদের সামরিক ও কৌশলগত অবকাঠামো। যার মধ্যে সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আইডিএফ বলছে, হুতি বিদ্রোহীদের সামরিক শক্তি দুর্বল করার লক্ষ্যে
এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মানবিক সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ইসরাইলী হামলায় এটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই সংঘাত আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।”
এছাড়াও ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ব নেতা।
ইয়েমেন সংঘাতের প্রেক্ষাপট
হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনের সানা দখলে রেখেছে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলসহ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সাম্প্রতিক অভিযান পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে।
মানবিক সংকটের অবনতি
ইয়েমেন এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি। খাদ্য ও চিকিৎসার অভাব, পানীয় জলের সংকট এবং যুদ্ধজনিত দুর্যোগে ভোগা লাখ লাখ মানুষের জন্য এই বিমান হামলা একটি নতুন বিপর্যয় তৈরি করেছে। বিমানবন্দর ধ্বংস হওয়ায় জরুরি সহায়তা পৌঁছানো এখন আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাধানের আহ্বান
ইসরায়েলের হামলা এবং ইয়েমেনের চলমান সংঘাত বিশ্ববাসীর জন্য একটি সতর্ক সংকেত। শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং সংঘাত থামাতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধানই ইয়েমেনের জনগণের জন্য স্থায়ী মুক্তির পথ।