মাসরুফ হোসেন
এ বছর চল্লিশ হতে যাচ্ছি। এই চার দশকে শেখা বিশটা “মহাসত্য” নিচে উল্লেখ করছিঃ
১) টাকা-পয়সা প্রচণ্ড দরকারি জিনিস। পুরুষ মানুষের পকেটে টাকা না থাকলে তার সাথে মানুষ রাস্তার কুকুরের চেয়েও খারাপ আচরণ করে।
২) বেশিরভাগ মানুষ অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর, সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানী।
৩) অধিকাংশ মানুষ অপরাধ করে না সাহসের অভাবে। এভরিবডি ইজ আ পটেনশিয়াল ক্রিমিনাল।
৪) কাজ থাকলে মানুষ আপনাকে পঞ্চাশ বার কল করবে, কাজ শেষ হবার পর কল করে এটুকুও জানাবে না যে কাজটা হয়ে গেছে।
৫) কার্মা বলে কিছু নাই, সব বোগাস। সারাজীবন অন্যের হক মেরে, অন্যের উপর অত্যাচার করে বেঁচে থাকা মানুষের ছেলেমেয়েও বড় পজিশনে যায়, ভাল মানুষও হয়, সে নিজেও মরে পরম শান্তিতে, স্বাভাবিকভাবে।
৬) মানুষ প্রচণ্ড দুর্বল প্রাণী। সবচেয়ে বড় গাধা সেই ব্যক্তি, যিনি ভাবেন লাইফ তার কনট্রোলে আছে, কারণ কনট্রোল পাল্টাইতে এক সেকেন্ডও লাগে না।
৭) মানুষের জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নাই আসলে। মৃত্যুকে ভুলে থাকা, দু:খময় এ জীবনকে নানারকম ছলাকলায় সাজিয়ে তোলাই তার উদ্দেশ্য। একেকজন এটা একেকভাবে করে।
৮) মানুষ খুবই নিকৃষ্ট প্রাণী। পশুপাখিরা মানুষের চাইতে অনেক বেশি মানবিক।
৯) কোনো কারণ ছাড়াই কিছু মানুষ আপনাকে তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে ঘৃণা করবে। আপনি তাদের কোনো ক্ষতি করেন নাই, জানেনও না যে এদের অস্তিত্ব আছে, তাও কোনোভাবে এরা আপনাকে চেনে এবং ঘৃণা করে।
১০) অপরের অপমান দেখে মানুষ যে আনন্দ পায়, শ্রেষ্ঠতম সুন্দরীর সাথে রতিক্রিয়া করেও ওই আনন্দ সে পায় না।
১১) নিজেরটা নিজে করে খাইতে না পারলে কেউ আপনাকে দেখবে না, পরিবার সবার আগে লাথি মারবে।
১২) বন্ধু বলে কিছু নাই, আপনার বন্ধু আপনি নিজে। পুরাটাই স্বার্থ। অনেক দিনের পুরানো বন্ধু ফোন করে পিরিতের আলাপ শুরু করার মানে ধরে নেবেন একটু পরই সে আপনাকে কোনো কাজের কথা বলবে।
১৩) শুধুমাত্র একে অপরের ভালো দিক দেখে প্রেম করলে মারা খাবেন। বরং একে অপরের সবচেয়ে খারাপ দিকের সাথে মানায় নিতে পারেন কিনা, এইটা দেখে প্রেম করলে ওইটা টিকবে।
১৪) সেক্স প্রচণ্ড জরুরি, সেক্স বিশ্বের সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতি। সেক্স লাইফ খারাপ হওয়া মানে জীবন বরবাদ। এজন্য সেক্স এডুকেশন জরুরি এবং তা সব বয়েসে।
১৫) লাইফে দুইটা জায়গায় মারা খাইয়েন না প্লিজ। ১) প্রফেশন চুজ করতে ২) পার্টনার চুজ করতে। এর মধ্যে প্রথমটা ভুল করলে পোষায়, হয়ত নেয়া যায়, দ্বিতীয়টায় ভুল করলে লাইফ শেষ।
১৬) পৃথিবীটা একটা খুবই কুৎসিৎ জায়গা, এই কুৎসিৎ জায়গাতে টিকে থাকতে হইলে আপনাকে নিজের একটা সুন্দর জগৎ বানায়ে নিতে হবে। এই জগৎটা দূর্গের মত আপনাকে বাইরের কলুষতা থেকে রক্ষা করবে। আমার ক্ষেত্রে এই জগৎটা হচ্ছে বই।
১৭) বেশিরভাগ সময়ে যেইটা ভাববেন, ওইটা হবে না। কোনো প্ল্যান কাজ করবে না। মানে, করলেও যেভাবে চান ওইভাবে হবে না।
১৮) রাতে শান্তির ঘুম, দুশ্চিন্তাহীন একটা বোরিং দিন- এই দুইটা জিনিস অমূল্য সম্পদ।
১৯) শরীরের এবং মনের যত্ন নিন। এই দুইটা জিনিস ছাড়া আপনার কিছুই নাই।
২০) এই ভয়ঙ্কর পৃথিবীতে কিছুটা শান্তি পাবেন একটা কাজ করলে- আপনার চাইতেও অসহায় কারো সাধ্যমত উপকার করলে। লোক দেখানো, ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া উপকার না, কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে সত্যিকারের উপকার। এই অন্ধকার পৃথিবীতে অসহায়ের পাশে একটু দাঁড়ানোর মত শান্তি আর কোথাও নাই।
এইগুলা একেবারেই ব্যক্তিগত মতামত। একমত হবার বাধ্যবাধকতা নাই।
লেখক: সম্পাদক, ইন্টেলিজেন্স রিভিউ, এসপি, বাংলাদেশ পুলিশ