আমার মনটা কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার মাটিতেই পড়ে আছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠানে যেতে না পেরে আফসোস করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দূরে আছি এটা ঠিক। আমার মনটা কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার মাটিতেই পড়ে আছে। অবশ্যই খুব তাড়াতাড়িই টুঙ্গিপাড়ার আসবো। তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে, তোমরা ভালো থাকো সুস্থ থাকো সেই দোয়া করি।

বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি গোলাপগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে যুক্ত ছিলেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বেলার বিভিন্ন মানবিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তখন তার ভিতরে যে মানুষের প্রতি দেশের প্রতি একটা ভালোবাসা ছিল সেকথা স্মরণ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, তোমরাই তো ভবিষ্যত। তোমরাই সামনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। যেখানে কোনো ক্ষুধা থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না। প্রত্যেক মানুষ ঘর পাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশ একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। সবাইকে আমরা ঘর করে দেব। প্রত্যেকটা বাড়িতে বিদ্যুৎ এনে দেব। প্রত্যেকটা বাড়িতে আমরা আলো জ্বালাব।

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আর সেই সঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পথে চলা। তাহলেই জীবনে বড় হতে পারবে। জীবনটাকে উন্নত করতে পারবে। আর বাবা-মা, তাদের মুখও উজ্জ্বল হবে।

তিনি বলেন, ছোট সোনামনিদের কাছে এটাই চাই, তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর কর। তোমরা লেখাপড়া শেখ। করোনার এই প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে এবং স্কুল আমরা তখনই খুলে দেব। তোমরা স্কুলে যেতে পারবে। সেই সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারবে। এখনও খেলাধুলা কর। আমি প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। যাতে সবসময় স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা সেখানে যেকোন খেলাধুলা কম্পিটিশন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, শুধু সারাদিন পড় পড় বললে তো আর ভালো লাগে না! কার ভালো লাগে? সারাক্ষণ যদি শোনে পড় পড়। পড়ার সঙ্গে খেলাধুলা করতে হবে, গান শুনতে হবে বা নিজেরা গান গাইবে, লিখবে। তোমাদের খুশি মত তোমরা কাজ করতে পারবে সেটাই আমরা চাই।

‘আজকের শিশুরা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, জীবনটাকে সুন্দর করবে’-এমন আশাবাদ করে শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন কর রঙিন- তাই আমরা ছোট শিশুদের জীবন আরও রঙিন, আরও সুন্দর সার্থক সফল করে গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন আইন গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গসহ তাদের কল্যাণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ তিনি। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে শিশুদের প্রতি যাতে প্রতিহিংসামূলক কোন ধরনের কাজ না হয় সেই ব্যাপারে সকলকে সচেতনতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের প্রভাব থেকে শিশুদের মুক্ত রাখা, মাদকের হাত থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতেও সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা পড়াশোনা কর, তোমরা অভিভাবকের কথা শোন, ভালো থাকো এবং তোমাদের জন্য যতটুকু যা করার, সেটা আমরা করে যাব। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন, এই স্বাধীন দেশের প্রত্যেকটা মানুষ তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে উন্নতজীবন পাবে এবং ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

টুঙ্গিপাড়া প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।