মো. বেলাল উদ্দিন
প্রতিদিন দেশের হাজার হাজার নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন। অথচ আমরা অনেকেই জানি না বর্তমানে নতুন ভোটার হিসাবে নিবন্ধন, তথ্য সংশোধন কিংবা কার্ড হারিয়ে গেলে পুনঃমুদ্রণ কপির জন্য অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন করা যায়।
জেনে নিন বিস্তারিত
১. নতুন ভোটার হিসাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া
প্রবাসী কিংবা বাদ পড়া ভোটারগণ অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে নতুন ভোটার হিসাবে নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য প্রথমে এই পোর্টাল থেকে তিনটি ধাপে (ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা) রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে হবে।
আংশিক ফরম পূরণ করে তা সংরক্ষণ (সেভ) করে পরবর্তীতে বাকি অংশটুকু পূরণ করার সুবিধা রয়েছে। তবে এর জন্য অন্তত একটি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।
সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করার পর আবেদনটির (পিডিএফ কপি) প্রিন্ট করে নিন্মলিখিত নথিপত্রসহ নির্ধারিত থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করতে হয়।
প্রয়োজনীয় নথি (ডকুমেন্টস)
- ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অফিস কর্তৃক নাগরিক সনদপত্র।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র।
- যে ঠিকানায় ভোটার হবেন, সেই ঠিকানার একজন ভোটারের এনআইডি কপি।
- যে ঠিকানায় ভোটার হবেন, সেই ঠিকানার গ্যাস/বিদ্যুৎ/পানি বিলের কপি।
- ভাড়া বাসায় অবস্থান করলে ভাড়ার চুক্তিপত্র।
- পিতা-মাতার এনআইডি কপি। যদি না থাকে তাহলে ভাইবোনের এনআইডি কপি।
আপনার রেজিস্ট্রেশন ফরমে দেয়া তথ্য ও সংযুক্ত ডকুমেন্টসমুহ সঠিক থাকলে বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হবে। তারপর নির্ধারিত সময়ে আইডি কার্ডটি প্রস্তুত হয়ে গেলে আপনার মোবাইলে এসএমএসে জানিয়ে দেয়া হবে।
এরপর অনলাইন থেকে কার্ডটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন, অথবা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকেও প্রিন্টেড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
২. ভুল তথ্য সংশোধনীর প্রক্রিয়া
প্রায়ই জাতীয় পরিচয়পত্রে নানা ভুল তথ্যের অভিযোগ পাওয়া যায়। যেমন- বাবার বয়স ছেলের চেয়ে ১০ বছর কম হয়ে গেছে, মায়ের নামের জায়গায় বসে গেছে বাবার নাম।
ব্যক্তি নিজেই হয়ত ফরম পূরণ করার সময় ভুলটা করেন অথবা সার্ভারে তথ্য যোগ করার সময় অপারেটরও ভুল করতে পারেন। সেটা যে কারণেই হোক না কেন, তথ্যে একবার ভুল হয়ে গেলে অনেক রকম বিপাকে পড়তে হয়।
অনেক সময় বাড়ির ঠিকানা বদল, বৈবাহিক অবস্থার পরিবর্তন ইত্যাদি নানা কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের দরকার পড়তে পারে। ভূল তথ্য সংশোধন বা রি-ইস্যুর আবেদন সরাসরি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে করতে পারেন।
এখন অনলাইনেও এই আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য শুরুতেই এনআইডি পোর্টালে ঢুকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্ট তৈরির সময় এনআইডি নম্বর এবং এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপটি দরকার হবে।
তাই অ্যাপটি আগে থেকেই আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে নিন। (বিঃ দ্রঃ এই অ্যাপ মূলতঃ ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনার এনআইডি’র তথ্য ব্যবহার করে অন্য কেউ যাতে নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই মূলতঃ এই অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।)
তথ্য সংশোধন/রি-ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় নথি
তথ্য সংশোধন/রি-ইস্যুর জন্য কিছু কাগজের কপি অনলাইনে আপলোড করতে হবে। যা কারণভেদে ভিন্ন। যেমন-
- নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদপত্র, পাসপোর্টের কপি;
- ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বিদ্যুৎ বা পানির বিলের কাগজ;
- বিয়ের পর স্বামীর নাম যোগ করতে চাইলে নিকাহনামা, স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে;
- বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামা সংযুক্ত করতে হবে।
আর রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মূলকপি স্ক্যান করে আপলোড করে দিতে হয়।
এনআইডি সংশোধন/রি-ইস্যু ফি দেয়ার মাধ্যম
- ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট মোবাইল ব্যাংকিং
- ওয়ান ব্যাংকের ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং
- ট্রাস্ট ব্যাংকের টি-ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যেকোনো একটি মাধ্যমে ফিস/চার্জ জমা প্রদান করতে হবে।
এনআইডি সংশোধনের ফি
যেকোনো একটি সংশোধন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। তবে উক্ত ফি’র সাথে শতকরা ১৫% হারে মূল্য সংযোজন কর দিতে হবে।
ফি পরিশোধ করে নির্বাচন কমিশনের পোর্টাল থেকে রেজিস্ট্রেশন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার জমাকৃত টাকার পরিমাণ দেখা যাবে।
কোন্ ধরনের সংশোধনে কী কাগজ লাগবে বা কত টাকা চার্জ লাগবে, তা ওয়েবসাইটেই বিস্তারিত দেয়া আছে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স রাইটার, ইমেইল-info@nakshitech.com