করোনায় প্রতি ৫ জনের একজনের মানসিক সমস্যা- যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার তিনমাসের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় একজনের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ সব সমস্যার মধ্যে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ও ইনসোমনিয়া অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

মহামারিতে মানসিক সমস্যায় মোকাবেলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনআইএইচআর অক্সফোর্ড হেলথ বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা। ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি জার্নালে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির করোনায় সংক্রমণের সম্ভাবনা মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে ৬৫ ভাগ বেশি। যা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার মতো অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টরের সাথে তুলনীয়।

গবেষণার অন্যতম লেখক এবং এনআইএইচআরের অ্যাকাডেমিক ক্লিনিক্যাল ফেলো ড. ম্যাক্স টাকুয়েট জানিয়েছেন, ‘এমন গবেষণা ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত এবং এর জন্যে আরো অনুসন্ধান প্রয়োজন। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে মানসিক অসুস্থতাকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন’।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতের মোটামুটিভাবে ৭ কোটি তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে করোনা শনাক্ত হয়েছে কিন্তু হাসপাতালে থাকতে হয়নি বা কোন জরুরি বিভাগে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, এমন ৬২ হাজার মানুষের তথ্য।

এ সব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ধরা পড়ার ১৪ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে শতকরা ১৮.১ ভাগ মানুষের মধ্যে। যাদের মধ্যে ৫.৮ ভাগেরই প্রথমবারের মতো মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে।

কোভিড-১৯ এর সাথে মানসিক সমস্যার অতিরিক্ত ঝুঁকির সরাসরি যোগসূত্র পরীক্ষা করতে এই গবেষণায় অন্যান্য রোগের একই সময়কালের তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য সংক্রমক, ত্বকের সংক্রামক, পিত্তথলির পাথর, প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর এবং বড় হাড়ে ফাটল।

এই সব অসুস্থতায় যেখানে তিনমাসের মধ্যে ২.৫ থেকে ৩.৪ শতাংশ রোগীর প্রথমবারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, সেখানে কোভিড-১৯ রোগের ক্ষেত্রে দেখা দেয় ৫.৮ শতাংশ মানুষের মধ্যে। উল্লেখিত রোগের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক পল হ্যারিসন জানান, করোনাভাইরাসের সাথে মানসিক সমস্যার সরাসরি কোন যোগাযোগ রয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন।

শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব রাখে এমন সাধারণ ফ্যাক্টর যেমন- আর্থ-সামাজিক অবস্থা, ধুমপান অথবা মাদক গ্রহণ গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে সুপারিশ রাখা হয়েছে যে, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। আর করোনাভাইরাসের কারণে দারিদ্র্যও বাড়ছে। ফলে একঘরে বেশি মানুষের বাস এবং অনিরাপদ কর্মপরিবেশের মতো ফ্যাক্টরের কার্যকারিতাও বাড়ছে।