দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা গ্রামের তুলনায় শহরে অনেক বেশি। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি ১০০ জনে তিনটি শিশুর অটিজম রয়েছে। এর বিপরীতে গ্রামে প্রতি ৭০০ জনে একজন। অর্থাৎ গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম শনাক্তের হার ২১ গুণ বেশি।
দেশে অটিজম নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। গবেষকরা শুধু এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে, এটি জিনগত সমস্যা হলেও পরিবেশগত কারণে এই সমস্যা বড়ে।
দেশে ঠিক কত শিশুর অটিজম রয়েছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনো নেই।
তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুসারে, ১ এপিল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত অটিজম সমস্যা থাকা শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার ১৪২।
অটিজম সমস্যাগ্রস্তদের মধ্যে ছেলে ৫২ হাজার ৮৩৮ জন ও মেয়ে ৩৩ হাজার ২৫০ জন। এ ছাড়া হিজড়া সম্প্রদায়ে রয়েছে ৫৪ জন। অর্থাৎ অটিজম শনাক্তদের মধ্যে ৬১.৩৩ শতাংশ ছেলে শিশু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুকে বছরের পর বছর সমাজের সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। তবে এখন সেটি ধীরে ধীরে কমে এসেছে।
তা সত্বেও বেশির ভাগ সমস্যাগ্রস্ত শিশু চিকিৎসা বা শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকরা। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।
এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার উদযাপিত হচ্ছে ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’।
দেশে ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার মেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাঁর উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় গঠিত হয় সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক (এসএএএন), যার সদর দপ্তর করা হয় বাংলাদেশে। তাঁর চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিস-এবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু জানান, ‘অটিজমের কারণ জানতে আমরা বেশ কিছু গবেষণা করেছি। এতে দেখা গেছে, অটিজম মূলত জিনগত সমস্যা এবং পরিবেশগত কারণে এর মাত্রা বাড়ে।
’একসময় মনে করা হতো, ভিটামিন ডি’র ঘাটতি থাকায় অটিজমের মাত্রা বাড়তে পারে। কিন্তু গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বায়ুতে সিসার মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেছি, কিন্তু এটি অটিজমের কারণ হিসেবে সম্পর্কযুক্ত মনে হয়নি। তবে বিভিন্ন জরিপে শহর অঞ্চলে অটিজমের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে শহরে পরিবেশগত কিছু সমস্যাকে ধরা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে বিএসএমএমইউয়ের অধীনে তিন বছরের কম বয়সী অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, অটিজমের মাত্রা এক হাজারে ১৭ জন। অটিজম আক্রান্ত চারজন ছেলে হলে একজন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, গড়ে প্রতি ১২৫ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের উপসর্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে দেড় থেকে তিন বছর।
ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু জানান, এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, একা একা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না।
অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ বা কাগজের টুকরা নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা বেশি রাতে ঘুমাতে চায়। এদের হজমের অসুবিধা থাকে। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার থাকে। অনেক সময় কারো কারো খিঁচুনি ও মৃগী রোগ দেখা দেয়।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ