জলাতঙ্কে মৃত্যু নিশ্চিত, সতর্কতা জরুরি

হেলথ ডেস্ক

জলাতঙ্ক একটি ভয়ানক মরণব্যাধি। এতে মৃত্যু অনিবার্য। জলাতঙ্কের কারণে পৃথিবীতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন মানুষের মৃত্যু হয়। বছরে মারা যায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় দুই থেকে তিন লাখ মানুষ কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। এতে বছরে প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা যায়। পাশাপাশি অনেক গবাদিপশুও এ রোগে প্রাণ হারায়।

জলাতঙ্ক কীভাবে হয়

জলাতঙ্ক বা Rabies মূলত Lyssavirus নামের একটি ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়, যা Rhabdoviridae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। একবার মাংসপেশী বা স্নায়ুর সংস্পর্শে আসলে এই ভাইরাস নিজে থেকেই বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে। ভাইরাসটি মূলত স্নায়ুতন্ত্রে অবস্থান করে, যা আক্রান্ত প্রাণীর লালা দিয়ে বের হয়। এ কারণে আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক ছড়ায়।

কুকুরের পাশাপাশি বিড়াল, বেজী, বানর এমনকি কিছু প্রজাতির শিয়ালও এই রোগের বাহক।

জলাতঙ্কের লক্ষণসমূহ

জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে সাধারণত ২-১২ সপ্তাহ সময় লাগে। রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো সাধারণ সর্দি বা কাশি। এর সাথে দুর্বলতা, জ্বর ও মাথাব্যাথা থাকে। পরবর্তীতে রোগীর কামড়ের স্থানে চুলকানি ও অস্বস্তি হয়। পরে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্বাভাবিক আচরণ, মতিভ্রম ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।

এই লক্ষণগুলো ২ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। জলাতঙ্কের আরেকটি সুস্পষ্ট লক্ষণ হলো পানিতে আতঙ্ক, অর্থাৎ রোগী পানি দেখলেই ভয় পায়। ল্যারিনজিয়াল প্যারালাইসিসের কারণে রোগী পানি পান করতে পারে না। একবার এই লক্ষণ প্রকাশ পেলে রোগীর মৃত্যু প্রায় অনিবার্য ধরে নেয়া যায়।

আক্রান্ত প্রাণীটির মধ্যেও প্রায় একই রকম লক্ষণ দেখা যায়, যে কারণে গ্রামে এ ধরনের কুকুরকে পাগলা কুকুর বলা হয়। জলাতঙ্কের চিকিৎসা বলতে এখনও সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। অতি অল্প সংখ্যক রোগী এ থেকে আরোগ্য লাভ করে।

জলাতঙ্ক থেকে বাঁচার উপায়

১. কোনো প্রাণী, বিশেষ করে জলাতঙ্কের বাহক কোন প্রাণী কামড় দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. কামড়ের স্থান বা ক্ষতস্থান যত দ্রুত সম্ভব পানি অথবা সাবান পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. সম্ভব হলে ক্ষতস্থানে পানিতে দ্রবীভূত আয়োডিন দেওয়া প্রয়োজন। আয়োডিন সংক্রমণের হার হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৪. গবেষণায় দেখা গেছে, পরিস্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেললে জলাতঙ্কের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়।

৫. দ্রুত জলাতঙ্কের পোস্ট-এ-পোজার টিকা নেওয়া প্রয়োজন। যা আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে।

৬. যে প্রাণীটি কামড় দিয়েছে, তার প্রতিও খেয়াল রাখা দরকার। প্রাণীটি যদি কারো পোষা হয়ে থাকে, তবে মালিককে তা জানানো প্রয়োজন।

৭. আর যদি বন্য বা রাস্তার হয়, তবে সেটিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

৮. প্রাণীটি পোষা বা বন্য যাই হোক না কেন, সে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে জীবাণুর বিস্তার রোধে ও মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে অবশ্যই একে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা নিতে হবে।