যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্যানসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিটি অব হোপ সম্প্রতি এওএইচ১৯৯৬ নামে নতুন একটি পিল প্রস্তুত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রচলিত চিকিৎসাকে আমূল বদলে ফেলতে সক্ষম এই এওএইচ১৯৯৬।
প্রচলিত চিকিৎসায় ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার বা কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। তবে কেমোথেরাপির একটি বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহারের কারণে অনেক সময় ক্যানসার আক্রান্ত কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু এওএইচ১৯৯৬ প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক দলের সদস্য লিন্ডা মালকাস আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে জানিয়েছেন, তাদের তৈরি নতুন এই পিলটি কেবল ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকেই আক্রমণ করে, সুস্থ কোষগুলোতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব এটি ফেলে না।
লিন্ডা বলেন, ‘মানবদেহে ক্যানসারের জন্য দায়ী মুলত প্রোলিফারেটিং সেল নিউক্লিয়ার অ্যান্টিজেন বা পিসিএনএ নামের একটি প্রোটিন। দেহের অভ্যন্তরে উৎপাদিত এই প্রোটিনটির প্রভাবেই মূলত ক্যানসারের আশঙ্কাযুক্ত টিউমার গঠিত হয়।’
‘আমাদের নতুন এই ওষুধটি একদিকে এই প্রোটিনের উৎস ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আঘাত হানে এবং একই সঙ্গে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকেও নিষ্ক্রিয় করে দেয়।’
‘ব্যাপারটিকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য আমরা একটি উদাহারণের আশ্রয় নিতে পারি—বিমানবন্দরে অনেক উড়োজাহাজ উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু যদি তুষারঝড় আসে, তাহলে সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়, বিমানবন্দরে অচল-স্থবির অবস্থায় পড়ে থাকে উড়োজাহাজগুলো।’
‘এখানে পিসিএনএ হলো সেই বিমানবন্দর, আর উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন উড়োজাহাজ হচ্ছে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলো এবং এওএইচ১৯৯৬ হলো সেই তুষারঝড়।’
মার্কিন এই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক লং গু দ্য ন্যাশনালকে বলেন, ‘বিশ্বে এ পর্যন্ত ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যত পিল উদ্ভাবিত হয়েছে, সেগুলোর একটিরও পিসিএনএ’র উৎস ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আঘাত হানার সক্ষমতা নেই। এই কারণে এতদিন পিসিএনএকে একটি ‘অনিরাময়যোগ্য’ ক্ষতিকর প্রোটিন হিসেবে বিবেচনা করা হতো।’
‘সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এওএইচ১৯৯৬ হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম ওষুধ, যেটি ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগটির একেবারে মূলে আঘাত হানতে সক্ষম।’
অধ্যাপক লং গু জানান, প্রাণীদেহে ইতোমধ্যে এই পিলটি প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন তারা। সেই পরীক্ষার ফল বেশ ইতিবাচক। শিগগরই মানবদেহের ওপরও এই ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।’
ওষুধটি বাজারে এলে স্তন, অগ্নাশয়, মস্তিষ্ক, ডিম্বাশয়, ত্বক ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা এটি সেবন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান।
আনা অলিভিয়া হিলি নামের একটি ৯ বছর বয়সী শিশুর নামে নামকরণ করা হয়েছে এওএইচএস ১৯৯৬ পিলটির। ১৯৯৬ সালে জন্ম নেওয়া আনা মাত্র নিউরোব্লাস্টোমা নামের বিরল এক মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০০৫ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
এওএইচ১৯৯৬ উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ইতোমধ্যে সেল কেমিকেল বায়োলজি নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটির নাম, ‘স্মল মলিকিউল টারগেটিং অব ট্রান্সক্রিপশন-রেপ্লিকেশন কনফ্লিক্ট অপর সিলেক্টেভ কেমোথেরাপি।’
সূত্র: ঢাকা পোস্ট