চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার, বিষন্নতায় মৃত্যু- বলছে পরিবার

ছবি: সংগ্রহীত

‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো আর প্রতিটা পরিবারে তৈরি হয় না। এতে সাধনার ব্যাপার আর মেধার ব্যাপার থাকে। আমার ছেলেটা শুধু ফার্স্ট-সেকেন্ড ছিল তা নয়, সে স্কোরিংয়ের দিক থেকে অনেক হাই ছিল। ২০১২ সালে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসবে সে রানার্সআপ হয়েছিল। ২০২১ সালে রংপুর মেডিকেলের এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফলে ১৮তম হয়েছিল। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, পারিপার্শ্বিক সব ধরনের জ্ঞানের অধিকারী ছিল সে। মেধাবী ছেলেটা শুধু আমার পরিবারের সম্পদ ছিল না, ছিল দেশের সম্পদ। ওকে হারিয়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শোবার ঘর থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হওয়া নবীন চিকিৎসক রিয়াজুল হাসানের (২৭) বাবা হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মানসিক বিষণ্নতা থেকেই হয়তো আত্মহত্যার মতো এমন ঘটনা ঘটিয়েছে রিয়াজুল।

গত রোববার সন্ধ্যায় নিজের শোবার ঘর থেকে চিকিৎসক রিয়াজুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২০২১ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি শেষ করেন রিয়াজুল। পরে রংপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি নেন। ২০২২ সালের আগস্টে তিনি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় বিয়ে করেন।

গতকাল সোমবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে রিয়াজুলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর দুইটায় গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

পুলিশ, স্বজন ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ঈদ উপলক্ষে রিয়াজুল সম্প্রতি বাড়িতে আসেন। তবে তাঁর স্ত্রী দিনাজপুরে বাবার বাড়িতে ছিলেন। রোববার দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের শোবার ঘরে ঘুমাতে যান তিনি। সন্ধ্যা হলেও ঘুম থেকে না ওঠায় কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে ডাকতে থাকেন।

দীর্ঘক্ষণ দরজা না খোলায় স্বজনেরা চিৎকার করতে শুরু করলে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। পরে পুলিশকে খবর দেন স্বজনেরা। পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরের বৈদ্যুতিক পাখায় (ফ্যান) গামছা প্যাঁচানো তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।

সুরতহাল শেষে স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রোববার রাতেই লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহ থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মেধাবী রিয়াজুলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা। রিয়াজুলের প্রতিবেশী আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রিয়াজুলের এমন মৃত্যু আসলে মেনে নেওয়ার মতো নয়। অনেক নম্র-ভদ্র একটা ছেলে ছিল। ভালো ছাত্র হিসেবে, চিকিৎসক হিসেবে এলাকার সবাই তাঁকে নিয়ে গর্ব করতেন।

রিয়াজুলের স্কুলজীবনের সহপাঠী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রিয়াজুল আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতত। এমন একজন বন্ধুকে আকস্মিকভাবে হারিয়ে আমরা সবাই হতবাক হয়ে গেছি।’

পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার বলেন, ঘটনার দিন খবর পেয়ে তাঁরা ওই চিকিৎসকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি তাঁদের কাছে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো