পবিত্র জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

ইসলামের দৃষ্টিতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই দিনগুলোর রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু আমল।

এক হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল আল্লাহর কাছে যতটা প্রিয় তা অন্য কোনো সময়ে নয়। সাহাবারা আরজ করেন, আল্লাহর পথে জেহাদ থেকেও প্রিয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে কোনো ব্যক্তি যদি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হয়ে আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন’। (সহিহ বোখারি)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জিলহজের দশ রাতের কসম করে এর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। বলা হয়েছে, ‘শপথ ফজরের। দশ রাতের। জোড় ও বেজোড়ের’। (সূরা ফজর, আয়াত ১-৩)

মুফাসসিরগণের মতে, এখানে দশ রাত বলতে জিলহজের প্রথম দশ রাত এবং বেজোড় বলতে আরাফার দিন এবং জোড় বলতে কোরবানির দিন বোঝানো হয়েছে (তাফসিরে মারেফুল কোরআন)। জিলহজের নবম তারিখটি আরাফার দিন। সেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে বড় রোকন। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের মতো অন্য কোনো দিন আল্লাহ অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। সেদিন তিনি দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, ‘দেখ, আমার বান্দারা এলোমেলে চুল ও ধূলি ধূসরিত শরীরে আমার দরবারে আগমন করেছে। লাব্বাইকা বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম।’

জিলহজ্ব মাসের উল্লেখযোগ্য আমল

পবিত্র জিলহজ্ব মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

নখ, চুল, মোচ ইত্যাদি না কাটা: জিলহজের চাঁদ দেখার পর হাত-পায়ের নখ না কাটা। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানি করতে চায়, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর চুল ও নখ না কাটে’। (ইবনে মাজাহ: ৩১৮৭)

রোজা রাখা: তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জিলহজের প্রথম দশকের প্রত্যেক দিনের রোজা সওয়াবের বিচারে এক বছরের রোজার সমান এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবেকদরের ইবাদতের সমতুল্য’। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আরাফার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের ও সামনের এক বছরের পাপ মাফ করে দেবেন’। (সহিহ মুসলিম)

স্রষ্টাকে স্মরণ করা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে’। (সূরা হজ, আয়াত ২৮)

আলেমদের মতে, নির্দিষ্ট দিন বলতে এখানে জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দিন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ দিনগুলোর ইবাদত তার কাছে অন্য সময়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) উচ্চারণ করো’। (মুসনাদে আহমদ)

বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বাজারে গিয়ে উচ্চস্বরে তাকবির বলতেন। তার তাকবির শুনে অন্য লোকেরা তাকবির বলতো। বিশেষ করে জিলহজের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর উচ্চ আওয়াজে একবার তাকবির পাঠ করা সবার জন্য আবশ্যক। একে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়।

তাকবিরটি হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।

বেশি বেশি নফল ইবাদত করা: হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, ‘বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। এমনকি আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি’।

গোনাহ পরিহার করা: এ দিবসগুলোতে ইবাদতের সওয়াব যেমন বেশি, তেমনি পাপকাজে জড়িয়ে পড়াও গুরুতর। তাই এ মাসে যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকা এবং কৃত পাপের জন্য তওবা করা অপরিহার্য।

ঈদের দিন কোরবানি করা: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই আল্লাহর দরবারে সওয়াব পৌঁছে যায়’। (তিরমিজি)