দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা!

দৈনিক ইত্তেফাক

করোনাভাইরাসের মহামারিতে বড় ধরনের আর্থিক ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২২ সালেই দেউলিয়া হতে পারে দেশটি। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্যা গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রেকর্ডমাত্রায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া দাম এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হয়ে পড়ায় দেউলিয়া হওয়ার এমন আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এই সংকটের জন্য করোনাভাইরাস মহামারি আংশিকভাবে দায়ী।

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে থমকে আছে পর্যটন খাত। যা প্রভাব ফেলেছে দেশটির অর্থনীতিতে। সামগ্রিকভাবে উচ্চ ব্যয় ও করের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব কমেছে। চীনের কাছে বড় ঋণ এবং কয়েক দশকের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে।

দেশি ঋণ ও বিদেশি বন্ডের টাকা শোধ করতে সরকার টাকা ছাপানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে শ্রীলঙ্কায়।

কলম্বোর গাড়িচালক অনুরুদ্ধ পারানাগামা পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য ও গাড়ি কেনার ঋণ শোধ করতে আরেকটি কাজ শুরু করেছেন। এরপরও পোষাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধ করা আমার জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ, খাবার কেনার পর কোনও টাকাই থাকছে না। তিনি আরও জানান, তার পরিবার এখন তিন বেলার বদলে দুই বেলা খাবার খায়। গ্রামের মুদির দোকানে ১ কেজির প্যাকেট কেনার মতো সামর্থ্য নেই কারও।

তাই ১০০ গ্রামের ছোট ছোট প্যাকেট করা হয়। সবাই এখন ১০০ গ্রাম মটরশুটি কিনছি। অথচ আগে আমরা সপ্তাহে ১ কেজি কিনতাম। শ্রীলঙ্কায় পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে যে, প্রতি ৪ জনের ১ জন পাসপোর্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন।

বেশিরভাগ তরুণ ও শিক্ষিত। তারা দেশ ছাড়তে চান। দ্বীপ রাষ্ট্রটির জন্য সবচেয়ে বড় বোঝা হলো তাদের বিদেশি ঋণ। বিশেষ করে চীনের কাছে তাদের অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। ৫০০ কোটি ডলার দেনা রয়েছে চীনের কাছে।

এসবের মাঝেই গত বছর বেইজিংয়ের কাছ থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে কলম্বো। আগামী ১২ মাসে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে দেশি ও বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে ৭৩০ কোটি ডলার। জানুয়ারিতেই আন্তর্জাতিক বন্ডের জন্য ৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।

যদিও নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৬০ কোটি ডলার। বিরোধী দলীয় এমপি ও অর্থনীতিবিদ হার্শা ডি সিলভা সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে ঘাটতি থাকবে ৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সেই বিদেশি ঋণ দাঁড়াবে ৪৮০ কোটি ডলার। তিনি বলেন, পুরো দেশ একেবারে দেউলিয়া হয়ে যাবে।