১৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেবেন ক্যান্সার হাসপাতালের তিন কর্মকর্তা

ক্যান্সার হাসপাতাল

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

আইসিইউয়ের জন্য কেনা উচ্চমানের ভেন্টিলেটর স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলার দায়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান তিন কর্মকর্তাকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- এএমএম শরিফুল আলম, মোল্লা ওবায়দুল্লাহ এবং আইসিইউয়ে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা মানস কুমার বসু। প্রথম দুজন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করে তা হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিলে জমা দিতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তবে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে পিডিআর (পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এ্যাক্ট, ১৯১৩) আইন অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে।

এর আগে, গত ২ জানুয়ারি এনআইসিআরএইচের আইসিইউয়ের জন্য কেনা উচ্চমাত্রাসম্পন্ন কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে এই বেঞ্চ।।

সেই সঙ্গে এ যন্ত্র স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-অবহেলা খতিয়ে দেখে এক মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিবকে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।

আদালতের নির্দেশনা

ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি আরও কিছু নির্দেশনা এসেছে হাইকোর্টের রায়ে।

  • সেসব নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হবে।
  • চিকিৎসার জন্য যেকোনো যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সামগ্রী বা ওষুধ কেনার আগে অবম্যই বিমেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিাহিদা নিরূপন করে সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ মান সম্পন্ন চিকিৎসা সামগ্রী, যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে।
  • চাহিদা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা সম্পন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/ইমারত নির্মাণ প্রয়োজন কনিা তা নিরূপন করতে হবে; অবকাঠামো দ্রুত প্রস্তুত হওয়া সাপেক্ষে যন্ত্রপাতি কিনতে হবে।
  • সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পর‌্যাপ্ত সংখ্যাক উপযুক্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ রাজস্ব খাতে হওয়া উচিত। আউট সোর্সিংয়ে নয়। কারণ আইট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহিতা থাকে না।
  • যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে অসম্ভব ও অতিমূল্য নির্ধারণ করে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়; প্রাক্কলন নির্ধারণে সঠিক ও বাস্তবসম্মত মূল্য নির্দারণ করতে হবে।
  • ঠিকাদারের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি গ্রহণ বা বুঝে নেওয়ার আগে সরবরাহকৃত পণ্যের মান ও গুণ নিশ্চিত হতে হবে।
  • জরুরিভিত্তিতে কোনো যন্ত্র কেনা বা চালু করার ক্ষেত্রেও একইভাবে শর্ত পূরণ করতে হবে।
  • প্রতিটি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করতে হবে; যাদের দায়িত্ব হবে যন্ত্রপাতি যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রীর যথাযথ মান নিরীক্ষা করা এবং যন্ত্রপাতিগুলো কার‌্যকর ও সচল রাখা।
  • কোনো যন্ত্রপাতি মেরামত ও কিংবা ওভার হোলিংয়ের প্রয়োজন হলে অবশ্যই যন্ত্রপাতি চালু ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নিলে তদারকির জন্য গঠিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটিকে তা একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানাবেন।
  • এ বিষয়ে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দায় নির্দারণ করবেন। আর্থিক ক্ষতি হলে যার কারণে ক্ষতি হবে তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • স্থাপিত প্রতিটি যন্ত্রের কক্ষের বাইরে যন্ত্রের কর্মক্ষমতা ও মেয়াদকাল লিখিতভাবে উল্লেখ করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে যন্ত্রটির মেয়াদকাল ও বর্তমান অবস্থা দৃশ্যমান থাকে।
  • উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর‌্যায়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যাতে যন্ত্রপাতিগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর থাকে।
  • আরেকটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হল।