রাজধানীর মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে তিন বছরে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছেন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্তরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে ফুসফুসের ক্যান্সারের মূল কারণ ধুমপান। দিনদিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে।
মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে ২০১৫ থেকে ২০১৭ এই তিন বছরে মোট ৭৬ হাজার ৫৪৩ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৩৬৯ জন নারী-পুরুষের পরীক্ষার পর ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
১২ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার সকালে মহাখালীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের’ (ক্যান্সার হাসপাতাল নামেই বেশি পরিচিত) তিন বছরের এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। সভাপতিত্ব করেন এই হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মোস্তাক হোসেইন। হাসপাতালের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যান্সার হাসপাতালে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫,৮৮৭ জন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এটা মোট ক্যান্সার আক্রান্তের ১৬.৬ ভাগ।
এরপরই রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী। এই তিন বছরে মোট ৪,৯৯৮ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এটা মোট ক্যান্সার আক্রান্তের ১৪.১ ভাগ। অপর দিকে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীরা রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে। তাদের সংখ্যা ২,৭১৯ এবং শতকরা হিসাবে মোট আক্রান্তের ৭.৭ শতাংশ।
১,৫৮২ জন খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এ সময়ের মধ্যে। খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্তদের অবস্থান চতুর্থ। ফুসফুস ক্যান্সারে অবশ্য পুরুষ বেশি আক্রান্ত। এদের সংখ্যা ৫,০০৫ জন। নারীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৮৮২ জন।
ফুসফুস ক্যান্সারে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে পুরুষরা বেশি ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করেন। এই বদভ্যাসটি নারীদের কম।
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ক্যান্সারের মতো এই ভয়াবহ রোগ সম্বন্ধে জানতে এবং এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল প্রণয়নে দেশব্যাপী ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রয়োজন। তাহলে জানা যাবে, সারা দেশে কতজন রোগটিতে আক্রান্ত। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে একটি টেকসই কৌশল প্রণয়নে কাজ করা তখন সহজ হবে।
নানান বয়সী প্রায় ১১ হাজার ক্যান্সার রোগীর উপরে গবেষণা করে বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রকোপ বিষয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ডা. রাসকিন জানান, ফুসফুসের ক্যান্সারের মূল কারণ হিসেবে ধুমপানের পরই রয়েছে বায়ুদূষণ। তবে শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ডা. রাসকিন বলছেন, আগের এক গবেষণায় তারা দেখেছিলেন বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রকোপটাই বেশি। তবে এখন স্তন ক্যান্সারের রোগীই বেশি দেখা যাচ্ছে। সার্বিকভাবে হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।