ডা. সাঈদ এনাম
নায়িকা জ্যোৎস্না সুন্দরীকে সাপে কামড় দিয়েছে। মাগো বাবাগো বলে তিনি এক চিৎকারে চিৎপটাং । নায়ক আক্কেল তখন পাশের টিলায় বাগানে চুলার জন্যে বাঁশ কাটছিলেন । চিৎকার শুনে তিনি দৌড়ে এসে দেখলন জ্যোৎস্না সাড়া শব্দহীন, আর পাশে আঁকাবাঁকা দৌড়ে পলায়মান কালো একটা সাপ।
ব্যাস, আর কোন কথা নেই। নায়ক আক্কেল ঝাঁপিয়ে পড়লেন জ্যোৎস্নার পায়ের ওপর । ঠিক যেখানে সাপে কামড় দিয়েছে, সেখানে মুখ দিয়ে রক্ত চুষে বিষ বের করতে লাগলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরপরই ওয়াক ওয়াক করে মুখ থেকে রক্ত ফেলছেন নায়ক। বিষ মিশ্রিত কালো সে রক্ত।
কিছুক্ষণ পরই নায়িকার জ্ঞান ফিরে এলো। তার দেহে বা রক্তে সাপের বিষ বা বিষক্রিয়া নেই । নিজের জীবন বাজি রেখে নায়ক আক্কেল সব বিষ মুখ দিয়ে শুষে বের করে এনেছেন।
এমন কাণ্ড দেখে তো নায়িকার আক্কেলগুড়ুম। চোখে চোখে চাওয়া-চাওয়ি । এরপরই দু’জনকে দর্শকরা আবিষ্কার করেন নির্জন কোন বাগানে। বাদ্য-বাজনার তালে তালে সেই নির্জনতা ভাঙে। চলে দিড়িম দিড়িম নাচ।
বাংলা বা হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রথম অংশে হঠাৎ করে প্রেম উৎপাদনের জন্য এমন চিত্রের অবতারণা করেন পরিচালক । সাপের সব বিষ শুষে নিয়ে মহানায়ক আক্কেল জ্যোৎস্না সুন্দরীর হৃদয়ে ভালোবাসার সুনামি তৈরি করতে সক্ষম হন।
কিন্তু প্রিয় পরিচালক মহোদয়, ঠোঁট দিয়ে চুষে এভাবে বিষ নামানোর পদ্ধতিটা দেখানো কি ঠিক হলো ? মূলতঃ সিনেমার কাহিনীতে এই ভুল চিকিৎসা পদ্ধতিই দেখানো হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরে। সাপে কাটা স্থানে রক্ত শুষে নিয়ে রুগীকে সুস্থ করে তোলা যায়, মেডিকেল সায়েন্সের কোথাও এমনটা আছে বলে আমার জানা নেই ? বছরের পর বছর এমন একটা ভ্রান্ত দৃশ্যের অবতারণা কি শুভকর?
নাটক সিনেমায় এমন সব উদ্ভট বিনোদন রেখে ভালো অনেক কিছুই দেখানো যায়। আর আমাদের মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন দেশে ভালো জিনিস বেশি বেশি করেই দেখানো উচিত। সত্য কথাটি হলো সাপের বিষ শুষে নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। সাপে কাটা স্থান চুষতে গিয়ে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
তবে কেন এমন দৃশ্য ছবিতে দেখানো হয়?
আসলে যারা এসব কাহিনী দিয়ে ছবি তৈরি করে থাকেন, তাদের খুব একটা সায়েন্টিফিক জ্ঞান আছে বলে হয় না । কোনটা দেখানো সঠিক বা বেঠিক, অনেকে এসবের ধার ধারেন না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য কীভাবে সস্তা প্রক্রিয়ায় ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে দর্শককে টেনে রাখা যায়।
কীভাবে সাপে কাটা রোগীকে বাঁচাতে হয়?
সাপে কাটা রোগীর কাটা অংশের উপরে হালকা বেঁধে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে । সাপে কাটা নিশ্চিত হলে রোগীকে এন্টি স্নেক ভেনাম দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলবেন চিকিৎসকরা। চলচ্চিত্র পরিচালক অবশ্য বলবেন, দর্শকরা কি সাপে কাটা রোগীর আসল চিকিৎসা মেনে নেবে ? এতে কি বিনোদন হয়? দর্শক মানবে, নায়িকার পায়ে চুষনি চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই তো এমন দৃশ্যের অবতারণা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ; মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন, আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজি।