শিশুর জ্বর ও খিঁচুনি এবং করণীয়

ডা. সাঈদ এনাম, আত্মহত্যার চিন্তা,

ডা. সাঈদ এনাম

জ্বর হলে কোন কোন শিশুর খিঁচুনি উঠতে পারে। এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। শিশুর খিঁচুনি ওঠা কোন মা দেখেননি, এটা কম পাওয়া যাবে। জ্বর সাধারণত ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে উঠলে এই খিঁচুনি দেখা যায়।

সাধারণত ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জ্বর-খিঁচুনি দেখা দেয়। তবে সব বাচ্চাদের জ্বর হলেই খিঁচুনি হয় না। এটা খানিকটা জেনেটিক্যাল। আপনার শিশুর জ্বর হলে যদি খিঁচুনি হয়, তবে ভয় পাবেন না।

খিঁচুনি হলে তাড়াহুড়ো করা, কান্নাকাটি করা, বাচ্চাকে নিয়ে ঝাঁকুনি দেওয়া, দৌড়াদৌড়ি করা বা বাচ্চার পিঠ চাপড়ে দেওয়া, বাচ্চার মুখের ভিতর পানি দেওয়া, তাবিজ দেওয়া ইত্যাদি করা যাবে না।

নিজেকে শান্ত রাখুন। বাচ্চাকে এক পাশে- ডানে বা বায়ে আলতো করে শুইয়ে রাখুন। তার আশপাশের সুচালু ধারালো, শক্ত জিনিস থাকলে সরিয়ে নিন। কারণ আঘাত পেতে পারে।

শিশুর জিহবা বা ঠোঁট দাঁতের মধ্যে পড়েছে কি-না খেয়াল করবেন। কখনো বাচ্চাকে চেপে ধরে তার খিঁচুনি বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না। চেপে ধরে খিঁচুনি বন্ধ করা যায় না। শক্ত কাপড় পরনে থাকলে খুলে দিন।

বাচ্চার শরীর মাথা গরম থাকলে ঠাণ্ডা পানিতে সুতির কাপড় ভিজিয়ে বাচ্চার শরীর ও মাথা মুছে দিন। অনেকে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে মাথায় ধরে রাখেন। এটা করা যাবে না।

বাচ্চাকে পানি খাওয়ানো, মুখে পানি ছিটা দেওয়া, মাথায় নিয়ে ঝাঁকুনি দেওয়া ইত্যাদি অবশ্যই অবশ্যই করবেন না। ১ থেকে ২ মিনিট পর খিঁচুনি এমনিতে থেমে যাবে। অপেক্ষা করুন সে পর্যন্ত। এরপর আপনার ডাক্তারকে ফোন করুন বা হাসপাতালে নিয়ে যান।

খিঁচুনি শেষ হলে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাকে ঘুমাতে দিন। খিঁচুনি বেশীক্ষণ স্থায়ী হলে দ্রুত হাসপাতাল বা আপনার চিকিৎসকের কাছে নিন। মনে রাখবেন, জ্বর হলে কিছু কিছু শিশুর খিঁচুনি হয়ে থাকে। এতে ভয়ের কিছু নেই।

যে শিশুর একবার জ্বর হলে খিঁচুনি হয়, মনে রাখবেন, ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সেই শিশুর জ্বর হলে খিঁচুনি হতে পারে। তাই সেই শিশুর জ্বর দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। জ্বর দেখা দেবার সাথে সাথে প্যারাসিটামল সিরাপ মুখে খাওয়াবেন, অথবা সাপোসিটরি ব্যবহার করবেন। পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানিতে সুতির কাপড় ভিজিয়ে শিশুর গা মুছবেন।

জ্বর-খিঁচুনি প্রতিরোধে আপনার ডাক্তার কিছু ঔষধ প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করতে বলবেন, সেটা অবশ্যই মেনে চলবেন।

তবে ৫ বছরের অধিক শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক বা বৃদ্ধের খিঁচুনি উঠলে অবশ্যই অবশ্যই সেটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কারণ এটা শিশুদের জ্বর-খিঁচুনির মতো সাধারণ বিষয় নয়।

আবার জ্বর ছাড়াও কোন শিশুর খিঁচুনি হলে অবশ্যই সেটা দ্রুত চিকিৎসককে জানাতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি, সিলেট মেডিকেল কলেজ; ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট ইংল্যান্ড; অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট।

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে ক্লিক করুন।