ডা. সাঈদ এনাম
বাল্যবন্ধু ডা. জামাল শুধু বাংলাদেশের নয় আমি মনে করি সে সারা বিশ্বের নিউরো-সাইকিয়াট্রিস্টদের জন্যে এক গর্বের বিষয়!
অনেক মানসিক রোগী মনে করেন বিষণ্ণতা, হতাশা কিংবা অন্যান্য মানসিক রোগ হলে জীবনে আর বুঝি এগুনো যায় না। এখানেই থেমে যায় ভবিষ্যত।
কিন্তু বন্ধু ডা. জামাল প্রমাণ করে দিলেন এ সত্যি নয়।
অদম্য মেধাবী ছাত্র ডা. জামাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ১৯৯৪ সনের ছাত্র ছিলেন।
সে সময় ফাইনাল প্রফের একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হলে তিনি মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন। এরপর আরো দুবার চেষ্টা করেন পরীক্ষা দেবার।
দুবারই সামান্যে ব্যবধানে উর্ত্তীণ হতে পারেন নি। এ নিয়ে ফের বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। নানান পারিবারিক চাপ ও বিরূপ পরিবেশে বিষণ্ণতা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে এক পর্যায়ে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েন।
এরপর চলে চিকিৎসা। কিন্তু মাঝেমধ্যে চিকিৎসা বিরতি হয়ে যেতো।
মেধাবী জামালের মেধার স্ফুরণ আর পড়ার প্রতি তার আগ্রহ দেখে পরিবারের সবাই অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে তার চিকিৎসা চালাতে থাকেন।
দীর্ঘ সফল চিকিৎসায়, জামালের অদম্য মনোবল আর পরিবারের সবার ঐকান্তিক সাহস সহযোগিতায় জামাল সুস্থ হন। ফের ফিরে আসেন পড়ার টেবিলে। মেডিকেলের সকল শিক্ষক তাকে সাহস যোগান।
জামাল দীর্ঘ বিশ বছর পর মানসিক রোগ কে জয় করে নিয়ে নতুন উদ্যম নিয়ে এবার পড়ার টেবিলে বসেন।
তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে এবার এক চান্সেই এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা পাশ করে বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকিয়াট্রিক রোগীর কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন।
উল্লেখ্য যে অর্থনীতিতে আমেরিকান নোবেলজয়ী জন ন্যাশ ও হঠাৎ মানসিক রোগে আক্রান্ত হন দীর্ঘ দশ বছর মানসিক রোগে ভুগছিলেন।
কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্টদের নিরলস প্রচেষ্টায়, চিকিৎসায়, পারিবারিক সহযোগিতায় অদম্য মেধাবী অর্থনীতিবিদ জন ন্যাশ মানসিক রোগ’কে জয় করে অবশেষে অর্থনীতিতে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন।
জন ন্যাশ তার অবদানের জন্যে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ডা. জামাল আমার বন্ধু। আমি পড়তাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে, সে পড়তো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে।
আমাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিলো সব সময়। অসুস্থকালীন সময়, চিকিৎসাকালীন সময় এমন কি এবার পরীক্ষাকালীন সময়েও। আমার একটা কথাই থাকতো, “দোস্ত এবার বসে যা টেবিলে, তুই পারবি…”।
যারা নিজের বা নিকটজনের মানসিক রোগ হলে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন, চিকিৎসায় অনাগ্রহ দেখান, উদ্যম হারিয়ে ফেলেন, মনে করেন এই বুঝি জীবন শেষ, তাদের জন্যে মেধাবী ডা. জামাল ও আমেরিকান নোবেলজয়ী জন ন্যশ মানসিক রোগকে জয় করে সফলকাম হবার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
আজ ডা. জামাল আমার চেম্বারে এসছিলো। অনেক গল্প করলাম দু’জনে। ছাত্রাবস্থায় সেদিনের আইটেম,কার্ড আর প্রফ গুলোর গল্প।
লেখক: এম বি বি এস (ডিএমসি, কে-৫২) এমফিল (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ
ইন্টারন্যাশনাল ফেলো: আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন