বিরল মাথাব্যথা: অ্যালার্ম ক্লক হেডেক বা হিপনিক হেডেক

ডা. সাঈদ এনাম, আত্মহত্যার চিন্তা,

ডা. সাঈদ এনাম

কেউ কখনও এমন মাথাব্যথার খবর পেয়েছেন, যাদের মাথাব্যথা শুরু হয় কেবল ঘুমিয়ে পড়লে! মাথাব্যথার যন্ত্রণায় তারা প্রায়ই গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠেন? জেগে উঠে নিজেকে খানিক ব্যস্ত রাখেন। এতে মাথাব্যথা কমতে শুরু করে!

এ ধরনের রোগী খুব কম পাওয়া যায়। একে ‘হিপনিক হেডেক’ (Hypnic Headache-HH) বলে। এর আরেক নাম ‘এলার্ম ক্লক হেডেক’ (Alarm Clock Headache)। ঘড়ির এলার্মের মতো ঠিক একই সময়ে এটা হয়ে থাকে, রোগী ঘুম থেকে উঠে যায়। তাই এমন নাম।

গভীর রাতে ঘুমানোর দু’তিন ঘন্টা পর শেষ রাতের দিকে শুরু হয় মাথাব্যথা। পনেরো মিনিট থেকে, দু’তিন ঘন্টা থাকতে পারে ব্যথা। ঘুম ভেঙে যায়। রোগী তখন হাঁটাহাঁটি, বইপড়া বা গান শোনায় ব্যস্ত থাকেন। এতে ধীরে ধীরে তার মাথাব্যথা কমতে থাকে।

বাংলাদেশে কেমন আছে এমন রোগী

বাংলাদেশের মেডিকেল জার্নালে এ রোগ নিয়ে কোন কেইস হিস্ট্রি উল্লেখ নেই। সুতরাং বলা যায়, আমার কেইস হিস্ট্রি এই প্রথম।

হিপনিক হেডেক কেইস ইন বাংলাদেশ

ভদ্রলোকের বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। ‘মাথাব্যথা’ হয় রাতে ঘুমানোর ২/৩ ঘন্টা পর। মাথাব্যথার জন্যে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে হাঁটাহাঁটি করেন, নামাজ পড়ে তেলাওয়াত করেন। ধীরে ধীরে মাথাব্যথা কমে আসে।

হিপনিক হেডেকে করণীয়

রোগীর সিটি স্ক্যান এবং আরো কিছু ইনভেস্টিগেশন করে অন্য কোন কারণে মাথাব্যথা হয় কি-না, তা নিরুপণ করতে হয়। তবে সাধারণত হিস্ট্রি থেকেই এই রোগ ডায়াগনোসিস হয়ে থাকে।

বিশ্বে এমন রোগী কেমন?

হিপনিক হেডেক বা ঘুমের সময় মাথাব্যথা একটি দুর্লভ রোগ। এটি এক ধরনের ক্লাস্টার হেডেক (Cluster Headache) এর মতো। মোট হেডেকের শতকরা ০’০৭%। খুবই কম। ফলে তেমন কোথাও উল্লেখ নেই। তাই গবেষণা চলমান।

চিকিৎসা

এ রোগের চিকিৎসাটাও বেশ অদ্ভুত।

ঘুমানোর আগে দুই মগ কফি খেতে হবে। কফি এডিনোসিন রিসেপ্টরকে ব্লক করে, ফলে ব্রেইনের রক্ত সঞ্চালন নালীগুলো সংকুচিত থাকে এবং এতে আর মাথাব্যথা হয় না। সাথে সাথে অন্যান্য পেইন কিলারও উপকারী। লিথিয়াম কার্বনেট কিছুটা কার্যকরী।

আমার পেশেন্টকে আপাতত কফি খাবার পরামর্শ দিয়েছি সাথে ফ্লুনারিজিন এবং পেইন কিলার পিজোটিফেন। গবেষণায় এই ড্রাগগুলো ব্যবহার করার পরামর্শ আছে।

[লেখকের এ ধরনের এক পেশেন্টকে নিয়ে লেখা গবেষণাপত্র/কেইস হিস্ট্রি রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট, ইংল্যান্ডের সায়েন্টিফিক রিভিউ কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়। জুন, ২০২১ এ প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক কংগ্রেস ও সায়েন্টিফিক সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম হিপনিক হেডেক কেইস প্রেজেন্টার হিসেবে তিনি তা উপস্থাপন করবেন]

লেখক: সাইকিয়াট্রিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ; ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন; ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট, ইংল্যান্ড

সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা! ডিপ্রেশন! অহেতুক ভয়! নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবছেন! দ্রুত বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। সাইকোহেলথ সার্ভিসের সহযোগিতা নিন।