সম্পাদকীয়
লকডাউনে শিশুদের আচরণগত সমস্যা নিয়ে আমরা প্রথম পর্বে আলোচনা করেছি। প্রতিকার হিসেবে তাদের সামলানোর বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কেও কিছুটা আলোচনা হয়েছে সেখানে। দ্বিতীয় পর্বে আমরা বড়রা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে পারি এবং সন্তান লালন-পালনের কিছু ইতিবাচক কৌশল (পজেটিভ প্যারেন্টিং টুলস) নিয়ে কথা বলব।
শুরুতেই জানাব এক মিনিটের শিথিলায়ন বা রিল্যাক্সেশন চর্চার পদ্ধতি সম্পর্কে-
১. জায়গা ঠিক করুন
- আরামদায়ক এমন জায়গা ঠিক করি, যেখানে কোন আওয়াজ নেই। চেয়ারে বসি, পা মেঝেতে রাখি, হাত আপনার পায়ের ওপর রাখি।
- আপনার আরাম অনুভূত হলে চোখ বন্ধ করুন।
২. চিন্তা, অনুভূতি, শরীর
ক. নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি এখন কী চিন্তা করছি?
- চিন্তাগুলো খেয়াল করি, এটা কি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক?
- আমার কেমন লাগছে,
- আমার কি ভাল লাগছে না।
- আমার শরীর কেমন লাগছে।
- আমার কি ব্যাথা বা দুশ্চিন্তা অনুভূত হচ্ছে।
খ. নি:শ্বাসের দিকে খেয়াল করুন
- নি:শ্বাসের দিকে কান পাতি, নি:শ্বাস নিচ্ছি ছাড়ছি।
- পেটে হাত রাখি, খেয়াল করি এটা উঠছে- নামছে।
- নিজেকে বলি, এটা ঠিক আছে, যাই হোক না কেন, আমি ঠিক আছি।
- এখন শুধু নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস খেয়াল করি।
গ. ফিরে আসুন
- খেয়াল করুন, আপনার পুরো শরীর কেমন মনে হচ্ছে।
- আপনার রুমের মধ্যকার শব্দ খেয়াল করুন।
ঘ. প্রতিফলন
- ভাবুন, “আমার কি ভিন্ন কিছু উপলব্ধি হচ্ছে?”
- আপনি প্রস্তুত হলে চোখ খুলুন।
মহামারীতে সন্তান লালন : বাসা শান্ত রাখার কৌশল
- মহামারী সম্পর্কিত প্রশ্নের সাদামাটা ও সঠিক জবাব দিন
- আপনার শিশুর অনুভূতির স্বীকৃতি দিন
- পছন্দের মানুষের সংস্পর্শে রাখুন
- ঠিক করুন, আবেগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন
- ঘর থেকে বের হওয়ার আগে শিশুকে বলুন
- কী করছে খেয়াল রাখুন
- বেশি উপহার দিন
সন্তান লালনের কৌশল (আপনি একা নন)
এক সময়ে একজন
- প্রতিটি বাচ্চার জন্য সময় বেঁধে রাখুন (২০ মিনিট করে)
- বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করুন, তারা কী করতে পছন্দ করে।
- একেবারে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে ভাবুন (মুখভঙ্গি নকল করুন)।
- টিভি ও ফোন বন্ধ রাখুন।
ইতিবাচক থাকা
- আপনি কেমন আচরণ দেখতে চান তা বলুন।
- আপনার শিশু যখনই ভাল আচরণ করবে, প্রশংসা করুন।
- আমি কীভাবে বলছি, তার উপর নির্ভর করছে।
- সত্যিকারের আন্তরিক হোন (১৫ মিনিট শান্ত থাকা প্রাকটিস করুন)।
- প্রিয়জনের সাথে সংযুক্ত থাকতে আপনার শিশুকে সাহায্য করুন।
স্বাস্থ্যকর রুটিন মানা এবং পজেটিভ প্যারেন্টিং কৌশল অনুশীলন
- শারীরিক শাস্তি এড়িয়ে চলা,
- ইতিবাচক শৃঙ্খলা কাজে লাগান,
- আপনার মনোযোগ ঠিক রাখুন,
- পুরস্কার ও সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগান,
- কখন জবাব দেবেন না জানুন,
- নিজের যত্ন নিন
মনে করে বিরতি নিন আর শিশুর সমস্যাটি নিয়ে মনোযোগ সহকারে ভাবুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন-
- সমস্যাটা কি এই মুহূর্তে কোন বিপদ ডেকে আনছে?
- এই অবস্থা কি স্থায়ী?
- আগামীকাল একই সমস্যায় আমি কেমন বোধ করব?
নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হলে বা নেতিবাচক অবস্থা মনে হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূত্র: ইউনিসেফ