লকডাউনে শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও প্রতিকার (পর্ব-১)

সম্পাদকীয়

আবেগীয় উপসর্গ

বোস্টন চাইল্ড হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী আচরণগত সমস্যার কিছু আবেগীয় উপসর্গ হলো-

  • সহজেই বিরক্ত বা বিচলিত হওয়া,
  • প্রায়ই রাগ দেখানো,
  • অন্যকে দোষারোপ করা,
  • নিয়ম মানতে অস্বীকার করা অথবা কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা,
  • তর্ক করা এবং মেজাজ দেখানো,
  • হতাশা কাটাতে সমস্যায় পড়া ইত্যাদি।

লকডাউনে আবেগীয় ও আচরণগত সমস্যা

করোনাকালীন লকডাউনে শিশুদের আবেগীয় ও আচরণগত সাধারণ যে সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়, তা হলো-

  • উদ্বেগ,
  • বিষন্নতা,
  • উদ্যমহীনতা,
  • সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া নষ্ট হওয়া,
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া বা খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা।

তবে গায়ে লেগে থাকা, অমনোযোগিতা এবং বিরক্তিভাব ৩-৬ বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

শিশুদের মধ্যে যা দেখা যেতে পারে বা যে সব সমস্যায় তারা পড়তে পারে, তা হলো-

  • মানসিক চাপ জনিত সমস্যা
  • বাজে খাওয়ার অভ্যাস
  • মেজাজ ও বিরক্তি
  • মনোযোগের সমস্যা
  • মনোদৈহিক সমস্যা
  • উদ্বেগজনিত আচরণ

শিশুদের সামলানোর কৌশল

শিশুরা যখন খারাপ আচরণ করে-

১. পুনর্নির্দেশ- খারাপ আচরণ দ্রুত ধরুন এবং আপনার শিশুর মনোযোগ খারাপ থেকে ভাল আচরণের দিকে সরিয়ে নিন। শুরুর আগেই তা বন্ধ করুন! যখন তারা অস্থির হতে শুরু করে, তখন আপনি আকর্ষণীয় বা মজাদার কোন কিছুর দিকে তার মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারেন, এভাবে ‘চল, আমরা একসাথে খেলি’।

২. বিরতি নিন- চিৎকার করতে মন চায়? নিজেই ১০ সেকেন্ড সময় নিন। শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে তা পাঁচবারে ছেড়ে দিন. এরপর শান্তভাবে জবাব দিন। বহু বাবা-মা বলেছে, এই পদ্ধতিটি বেশ কাজের।

৩. ফলাফল ব্যবহার করুন- শিশুদের কিছু করতে দায়িত্বশীল করে তুলতে ফলাফল সাহায্য করে। তারা নিজেকে শৃঙ্খলায় ও নিয়ন্ত্রণে রাখতেও শেখে। আঘাত ও চিৎকারের চেয়ে এটা অনেক বেশি কার্যকরী।

পরিণতি বোঝানোর আগে আপনার নির্দেশনা অনুসরণ করতে বাচ্চাকে পছন্দের সুযোগ দিন। ফলাফলে যাওয়ার সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। নিশ্চিত হোন যে, আপনি ফলাফল পর্যন্ত যেতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ- বাচ্চার কাছ থেকে এক সপ্তাহের জন্য ফোন সরিয়ে রাখাটা কঠিন। এক ঘণ্টার জন্য তা সরিয়ে রাখাটা বেশি বাস্তবিক। যখন এই ফলাফল শেষ হবে, তখন আপনার বাচ্চাকে ভাল কিছু করার সুযোগ দিন এবং এর জন্য প্রশংসা করুন। (সূত্র: ইউনিসেফ)

এছাড়াও যা যা করতে হবে-

১. সহমর্মিতা বা ইমপ্যাথি:

সহমর্মিতা বা ইমপ্যাথি হল আরেক জনের স্থানে দাঁড়িয়ে তার অবস্থা উপলদ্ধি করা এবং তা প্রকাশ করা। যা অনেক সময়ই ততটা সহজ হয়ে ওঠে না। এর কারণ হতে পারে, একই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের না থাকা।

সহমর্মী হতে তাই নিজের একই অভিজ্ঞতা না পেলে একই ধরনের আবেগ বা অনুভূতিকে খুঁজতে হবে। কারণ আমাদের সবার একই ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও সবার একই আবেগ দেখা যায়। যেমন- রাগ, হাসি, কান্না।

ধরুন, একজনের মন খারাপ, সে অভিজ্ঞতা আপনার নাও থাকতে পারে। কিন্তু দুঃখ নামের আবেগ আপনার মধ্যে রয়েছে। এই ধরনের আবেগের কথা চিন্তা করেও অন্যজনের মনের অবস্থাকে অনুভব করা সম্ভব।

সহমর্মিতার মানে হলো- সমব্যথী হওয়া, তার মত করে অনুভব করা, তার মত করে ভাবা বা চিন্তা করা এবং তার সাথে থাকা।

২. ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা
৩. মজার খেলা
৪. শিথিলায়ন
৫. বিকল্প চিন্তা
৬. দিনের রুটিন মানা
৭. শরীরচর্চা
৮. বাজে অভ্যাস ত্যাগ
৯. কাজের যত্ন
১০. মুভমেন্ট টেকনিক
১১. সাইকোএডুকেশন
১২. নিয়মমাফিক ঘুম

নিজে শান্ত থাকুন এবং মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা করুন

১. একটু বিরতি নিন। আপনি একা নন।
২. আপনার মনের কাছের কারও সাথে বা প্রিয়জনের সাথে কথা বলুন।
৩. আপনার শিশুর কথা শুনুন।

এক মিনিটের শিথিলায়ন বা রিল্যাক্সেশন চর্চা করুন, যখনই আপনার চাপ অনুভব হবে বা টেনশন অনুভব হবে।

(সূত্র: ইউনিসেফ)

এবার জানুন লকডাউনে শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও প্রতিকার (পর্ব-২)