যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বৈশ্বিক অগ্রাধিকার
ছবি: কাল্পনিক

সম্পাদকীয়

কোভিডের প্রকোপ কমে আসলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। মহামারীকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের গোড়ার দিকে বিশ্বের অচলাবস্থা, নানা প্রতিকূলতা ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেড়েছে বোঝা।

বিশ্বে শতকরা অন্তত ৮৫ ভাগ মানুষের বাস নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। একইভাবে যাদের মানসিক রোগ আছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি লোক এই সব দেশের বাসিন্দা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ব্যাপক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ব্যাপক আকার নেবে বিষণ্ণতা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক বা ১৮ ও তার ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের মধ্যে ১৮ শতাংশেরও বেশি কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। আর ১২ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর (৭-১৭ বয়সী) মাঝে মানসিক রোগ শনাক্ত করা গেছে ।

দেশে নারীদের মাঝে প্রতি ৫ জনে একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসছেন না ৯১ শতাংশের বেশি মানুষ। অন্যদিকে, পুরুষের মাঝে মানসিক রোগ নিয়ে বেশি স্টিগমা ও নেতিবাচক ধারণা দেখা যায়। এমনকি সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসার হার ২ শতাংশেরও কম।

মানসিক স্বাস্থ্যে স্টিগমা বা প্রচলিত কুসংস্কার হলো সমাজের অগ্রহণযোগ্যতা বা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি পরিবার ও সমাজের হেয় মনোভাব। সমস্যার সমাধান বা সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি যে বিপরীত আচরণ পাচ্ছেন, তা বৈষম্য তৈরির প্রাথমিক কারণ।

তবে আশার কথা হলো- চিকিৎসায় আসা দেশের বেশির ভাগ বা ৭২ শতাংশের বেশি মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে এই সেবার শরণাপন্ন হচ্ছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

মূলত স্টিগমা ভাঙতে পরিবার, প্রতিবেশী ও আশেপাশের মানুষের সাথে আমাদের নিজেদেরই কাজ করে যেতে হবে। নিজের যে কোন মানসিক রোগ বা সমস্যায় দ্রুত পরামর্শ নেয়াই একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের পরিচয় প্রদান করে।

স্টিগমা দূর করতে সামাজিত সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রয়োজন এই খাতে সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। বাড়াতে হবে চিকিৎসার মান এবং কর্মী। মনে রাখতে হবে সুস্থ নাগরিক মানেই সুস্থ দেশ, উন্নত ভবিষ্যত।