নিয়মিত ঘুমে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভবিষ্যত

নাঈমা জান্নাত

আজ ১৯ মার্চ, বিশ্ব ঘুম দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার দিবসটি পালিত হয়। ২০০৮ সালে প্রথম এই দিনটি পালন করে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন’ এর ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি। যাদের উদ্দশ্য ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো।

এ বছর বিশ্ব ঘুম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নিয়মিত ঘুম : স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পানি, বাতাস ও খাবারের মতো ঘুমও জরুরি।

এর মাধ্যমে সঞ্জীবনী শক্তি ফিরে পায় মানুষের শরীর। ক্লান্তি দূর করে পুনরুদ্যোমে কাজের উদ্দীপনা পায়।

ঘুম স্মৃতি পুনর্বিন্যাস করে এবং আবেগীয় বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। একইভাবে ঘুমের সমস্যা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।

সুস্থ থাকতে গড়ে দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। কারো কারো ঘুমাতে দেরি হয়। কেউ বা তাড়াতাড়ি জেগে ওঠেন। আবার পর্যাপ্ত ঘুমিয়েও তৃপ্তি পান না অনেকে। অনেকে মনে করেন, ঘুম বেশি হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ঘুমের মধ্যে হাঁটা, ভয়ের স্বপ্ন দেখা, মাঝরাতে জেগে যাওয়াসহ অনেকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। মাদকসেবী, ব্যথার রোগী বা শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা যায়।

ঘুমের সমস্যাও আবার মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস ও রাত্রিকালীন কাজের পেশাও ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।

প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গড়ে দৈনিক ১০ থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। আর টিনেজারদের জন্য সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় ঘন্টা ঘুমানো জরুরি।

তবে বাংলাদেশের শহুরে জীবনযাত্রায় ঘুম এমন নিয়মমাফিক হচ্ছে কি-না এবং এর কারণে শিশুরা দুর্বল স্মরণশক্তি ও অমনোযোগিতাসহ অন্য মানসিক সমস্যায় পড়ছে কি-না তা একটি বড় গবেষণার বিষয়।

বিশ্ব ঘুম দিবস

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভবিষ্যৎ বিশ্বে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘুমের সমস্যা আবির্ভূত হতে যাচ্ছে কি-না, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন।

এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতিবছর ২০ মার্চের (দিন ও রাত সমান) আগের শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৪৫ ভাগ মানুষের ঘুমের সমস্যা তীব্র। তবে ২০১২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গবেষণা অনুসারে, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাছাইকৃত আট দেশের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।

এর মধ্যে নারীরাই বেশি, ৪০ শতাংশ। এছাড়া ২৩ শতাংশেরও বেশি পুরুষের মধ্যে ঘুমজনিত সমস্যা তীব্র।

ঐ গবেষণায় ঘুমের সামাজিক কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, অল্পশিক্ষা, জীবনসঙ্গীর সাথে না থাকা ও ইচ্ছাকৃত নিম্নমানের জীবন-যাপন করা। গবেষণাটি চালানো হয় পঞ্চাশ ও তদুর্ধ্ব নারী-পুরুষের মধ্যে।

ঘুমের জন্য করণীয়

সবার জন্য ঘুমের যেসব নিয়ম মানা বাঞ্ছনীয়-

  • রাতে নির্ধারিত সময়ে ঘুমান এবং দিনে ৪৫ মিনিটের বেশি ঘুম এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত ও সময় বেঁধে ব্যায়াম করুন বা হাঁটুন।
  • ঘুমানোর আগে ছয় ঘন্টার মধ্যে চা, কফি বা সোডা জাতীয় পানীয় এবং চার ঘন্টার মধ্যে ধুমপান করবেন না।
  • শোবার ঘরে আরামদায়ক তাপমাত্রা এবং বায়ু প্রবাহের জন্য খোলামেলা আছে কি-না খেয়াল রাখুন। ঘুমানোর সময় ঘরকে কোলাহলমুক্ত ও আলোমুক্ত রাখুন।
  • বিছানাকে আরামদায়ক রাখুন। বিছানায় টিভি দেখা, রেডিও শোনা, গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত নেয়া বা সমস্যার সমাধান করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বিছানায় যাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসলে অন্য ঘরে যান এবং তন্দ্রাভাব আসার পর আবার বিছানায় ফিরে আসুন।

লেখক: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট , টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড