বিশ্বের সবচেয়ে সুখি দেশ কোনটি, বাংলাদেশের অবস্থান কত?

বিশ্বের সবচেয়ে সুখি দেশ ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট। এতে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখি দেশ ফিনল্যান্ড। এ নিয়ে টানা সাত বছরের মতো দেশটি এই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সুখি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।

বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থান

রিপোর্টে বলা হয়, সুখি হওয়ার সূচকে ৩০ বছর বয়সীদের ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। অন্যদিকে প্রবীণ বা যাদের বয়স ৬০ বছর বা তারও বেশি, তাদের ক্যাটেগরিতে সুখি দেশের সূচকে বাংলাদেশ আছে ১২০ নম্বরে। এর একধাপ নিচে রয়েছে ভারত। মিয়ানমার ১০২ নম্বরে। পাকিস্তান ১২২ নম্বরে।

অন্যদিকে, নিম্ন মধ্য বয়সীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯। উচ্চ মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে সুখি হলো যুবশ্রেণি। সবচেয়ে কম সুখি উচ্চ মধ্যবয়সীরা।

প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ভারতের অবস্থান ১২৬তম। আগের বছরও তাদের অবস্থান একই ছিল। ২০২০ সাল থেকে আফগানিস্তান রয়েছে তালেবানদের দখলে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই দেশটি রয়েছে তালিকার তলানিতে। মোট ১৪৩টি দেশের ওপর এই সূচক করা হয়েছে। আর ১৪৩ নম্বরেই রয়েছে আফগানিস্তানের নাম।

২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল সময়কালের পর সবচেয়ে দ্রুতগতিতে সুখ কমেছে আফগানিস্তানে। আর সবচেয়ে দ্রুতগতিতে তা বৃদ্ধি পেয়েছে লেবানন, জর্ডান, ইউরোপিয়ান দেশ সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও লাতভিয়ায়।

ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থান

সবচেয়ে সুখি দেশগুলোর মধ্যে এখন আর বিশ্বের কোনো বৃহৎ দেশের অবস্থান নেই। কমপক্ষে এক দশক আগে থেকে শুরু হওয়া এই রিপোর্টে এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি বিশ্বের সবচেয়ে সুখি ২০টি দেশের তালিকায় অনুপস্থিত । এ দু’টি দেশের অবস্থান যথাক্রমে ২৩তম ও ২৪তম।

পক্ষান্তরে শীর্ষ ২০ সুখি দেশের মধ্যে উঠে এসেছে কোস্টারিকা ও কুয়েত। তাদের অবস্থান যথাক্রমে ১২ ও ১৩। এতে বলা হয়েছে, শীর্ষ ১০ সুখি দেশের মধ্যে শুধু নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রেলিয়ার আছে কমপক্ষে দেড় কোটি জনসংখ্যা। শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে শুধু কানাডা ও বৃটেনের জনসংখ্যা কমপক্ষে তিন কোটি।

নরডিক দেশগুলো সবচেয়ে সুখি ১০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ধরে রেখেছে। ফিনল্যান্ডের পর যথারীতি আছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন।

গবেষণার সূচক

ব্যক্তিবিশেষের জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টির মূল্যায়ন, মাথাপিছু জাতীয় প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সাপোর্ট, সুস্থ জীবনের প্রত্যাশা, স্বাধীনতা, উদারতা ও দুর্নীতির ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কির সংশ্লিষ্ট গবেষক জেনিফার ডি পাওলা বলেছেন, প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কর্মজীবনে সুস্থ সমতা হলো ফিনল্যান্ডের মানুষের সুখি জীবনের মূলে। তাছাড়া দেশটির নাগরিকদের একটি সফল জীবন সম্পর্কে অধিক অর্জনযোগ্য অনুধাবন আছে।

ফিনিশ নাগরিকদের মধ্যে আছে শক্তিশালী কল্যাণমূলক সমাজ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা, কম মাত্রায় দুর্নীতি, ফ্রি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, ফিনিশ সমাজ বিশ্বাস, স্বাধীনতা ও উচ্চ মাত্রায় স্বায়ত্তশাসনের অনুভূতি দ্বারা পরিবেষ্টিত।

উদ্বেগজনক প্রবণতা

বিশ্ব জুড়ে বেশির ভাগ অঞ্চলে এবার দেখা গেছে বয়স্ক সিনিয়রদের চেয়ে তরুণ প্রজন্ম বেশি সুখি। তবে তারা সবাই নয়। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের পর নাটকীয়ভাবে ৩০ বছরের কম বয়সী উত্তর আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের গ্রুপের মধ্যে কমে গেছে সুখ। এসব স্থানে তরুণদের চেয়ে প্রবীণ প্রজন্ম বেশি সুখি।

পক্ষান্তরে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে একই সময়ে সব বয়সীদের মধ্যে সুখ বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের লোকজনের সব বয়সী একই পরিমাণ সুখি। ইউরোপ বাদে প্রতিটি অঞ্চলে সুখি হওয়ার ক্ষেত্রে অসমতা দেখা দিয়েছে। একে এই রিপোর্টের লেখকরা উদ্বেগজনক প্রবণতা বলে বর্ণনা করেছেন।