ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবন্ধন নেই

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

আয়ানের মৃত্যুর পর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসকসহ অজ্ঞাত কয়েজনকে আসামি করে মামলা করেন তার বাবা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ জানান আয়ানের অভিভাবকরা।

আয়ানের বাবার অভিযোগের পর গত ১০ জানুয়ারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় লাইসেন্স দেখাতে করতে ব্যর্থ হয় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখেছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন বা লাইসেন্সের জন্য আবেদন কখনই জমা পড়েনি।

সোমবার শিশু আয়ানের মৃত্যুতে তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নে রুল জারি করে হাইকোর্ট। পাশাপাশি সারা দেশে অনুমোদনহীন হাসপাতালের তালিকা এক মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লনিক বন্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল চলতে দেওয়া যাবে না।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এটা আমি একদিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে, এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য’।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন দেখা করে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান শিশু আয়ানের পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে, করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটনের পর জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই চলছে ওই হাসপাতাল।

২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর জানা যায়, ওই হাসপাতালেরও সেবা দেওয়ার অনুমোদন নেই।

এরপর সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর পাঠানো তথ্য নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়।

ওই তালিকায় সারাদেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের নাম আসে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় বলেছিল, ওই তালিকার মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও অনুমোদন পায়নি।

আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ। ওই তালিকার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজারের মত অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন ক্লিনিককে জরিমানাও করা হয়।

এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দাবি করেন, অনুমোদনহীন কোনো ক্লিনিক-হাসপাতাল ঢাকায় আর ‘চালু নেই’।