অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওর্ডার (ওসিডি)

Redundant Clothing Syndrome; ওসিডি;

ডা. সাঈদ এনাম

এ রোগটি খুবই কমন। এটি কম বয়সী মেয়েদের বেশী দেখা দেয়। অবসেসিভ (অবসেশন) হলো কোন একটি ব্যাপারে বারবার একই ভাবনার উদ্রেক। আর কমপালসিভ (কমপালশন) হলো- সে ভাবনার দেহ মনে যে অস্থিরতা, উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, সেই অ্যাংজাইটি, অস্থিরতা বা উদ্বেগ নিরসনে কোন কাজ বারবার করা।

সহজে বলি। যেমন ধরুন, রোগীর মনে বারবার ভাবনার উদ্রেক হয়, ‘তার হাতটি পরিষ্কার নয়’, বা ‘হাতে ময়লা লেগে আছে’ অথবা তার ‘হাতে জীবানু লেগে আছে’। একে বলে অবসেশন।

এ রকম ভাবনা ধীরে ধীরে তার দেহমনে প্রচণ্ড রকমের অ্যাংজাইটি বা অস্থিরতা তৈরি করে। তখন এই অস্থিরতা বা টেনশন থেকে মুক্তি পেতে তিনি তার হাতটি ‘বারবার ধুতে থাকেন’ বা ‘বারবার সাবান মেখে পরিষ্কার করতে থাকেন’। একে বলে কমপালশন।

বাংলায় ভাষায় এ রোগকে অনেকে শুচিবায়ু নামে অভিহিত করে থাকেন।

ওসিডি বা শুচিবায়ু রোগের লক্ষণ

১. রোগীর মনের মধ্যে সারাক্ষণ অতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বোধ কাজ করা,

২. বারবার হাত ধুয়া, হাতে সাবান মাখা, অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারের ফলে অনেক সময় হাতের আঙুলে শুকনো ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া,

৩. শরীরের পরিধেয় কাপড় বা চাদরে ময়লা লেগে আছে বা ময়লা লেগে যাবে, এ ভাবনা সারাক্ষণ মনের মধ্যে আসা,

৪. হাত ধোয়া, কাপড় ধোয়া বা গোসলে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ। ঘন্টার পর ঘন্টা বাথরুমে বসে থাকা এবং পানি ও সাবানের অপচয় করা,

৫. ব্যবহারিক জিনিসপত্র, কাপড়, চাদর বারবার ধোয়া। একবার ধুয়ে এনে আবার বাথরুমে গিয়ে ধোয়া। অতিরিক্ত ধোয়ার ফলে নতুন কাপড়, চাদর বিবর্ণ করে ফেলা।
৬. বারবার একই চিন্তা মনে আসা। যেমন- মনে হবে ‘ঘরের ছিটকিনিটা বোধ হয় লাগানো হয়নি’, তাই বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ‘বারবার ছিটকিনি চেক করা’।

গ্যাসের চুলা বোধ হয় নিভানো হয়নি, তাই ‘বারবার গিয়ে চুলা চেক করা’। নামাজের ‘নিয়ত করতে মনে হয় ভুল হয়েছে’ বা ‘সুরা পড়তে ভুল হয়েছে’ তাই বারবার নামাজ ভেঙে পুনরায় নামাজ শুরু করা। (অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও দেবতাকে পুজা অর্পণে একই রকম বারবার একই চিন্তার উদ্রেক হওয়া)।

৭. রোগী তার অযাচিত চিন্তা মন থেকে দূর করতে চান, চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেন না। চিন্তাগুলো অনেকটা জোর করে তার মনের মধ্যে চলে আসে।

৮. চাবি, ঘড়ি, কলম, মোবাইল, আই ডি কার্ড, মানিব্যাগ, টাকা ইত্যাদি যথাস্থানে আছে কি-না বারবার পরীক্ষা করা, বারবার গুনে দেখা।

ইন্টারেস্টিং হলো, এ রোগে আক্রান্ত রোগী বুঝতেই পারেন না যে, তিনি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওর্ডার রোগে ভোগছেন। এমনকি রোগীর আত্মীয়-স্বজনরাও অনেক সময় বিষয়টি ধরতে পারেন না।

রোগীর অতিরিক্ত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বোধ, বাথরুমে সময়ক্ষেপণ ইত্যাদিতে বিরক্ত হয়ে তারা সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হন।

অসচেতন থাকার ফলে অনেক সময় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রতি স্বজনরা মারাত্মক বিরক্তি প্রকাশ করেন। অনেক সময় অন্যায় আচরণ করেন, ইভটিজিংও করেন।

ভুল বুঝাবুঝি থেকে ক্ষেত্রবিশেষে সম্পর্কের টানা পোড়েন সৃষ্টি হয়। এমন কি দাম্পত্য কলহের ফলে ডিভোর্সও হয়। অথচ সচেতনতা ও চিকিৎসায় এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়।

চিকিৎসা

গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেইনের সেরোটোনিন (Serotonin) নিউরোট্রান্সমিটার কম থাকে। সাইকিয়াট্রিস্ট তাই সিলেকটিভ সেরোটোনিন রি-আপটেক ইনহিবিটর (SSRI) জাতীয় ঔষধ যেমন ক্লোমিপ্রামিন, ইমিপ্রামিন, সারটালিন, এমিট্রিপ্টাইলিন এ রোগে ব্যবহার করেন। এতে ব্রেইনে সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটার পরিমাণ বেড়ে যায়। ওসিডি সিমটম চলে যায়।

এছাড়া সাইকোলজিস্ট এর মাধ্যমে কগনিটিভ বিহেভিয়ার (CBT) থেরাপির মাধ্যমেও এ রোগীরা অত্যন্ত উপকৃত হন।

লেখক: এমবিবিএস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (হেলথ); সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি), সিলেট মেডিকেল কলেজ;
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন