দুষ্ট ভাইরাস এইচপিভিকে জানুন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা

সাইকোহেলথ নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশে নারী রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অবস্থান। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার- আইএআরসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৮,০৬৮ জন, যা নারী ক্যান্সার রোগীর প্রায় ১২%। মারা যান ৫,২১৪ জন।

দেশে ৫ম বারের মতো পালিত জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে জুম আলোচনায় এ তথ্য উঠে আসে। দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘এইচপিভি নামের দুষ্ট ভাইরাসকে জানুন’। দেশের খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ, ক্যান্সার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও নারী সংগঠনের নেতারা ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টি এ চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

অনুষ্ঠানে এইচপিভি ভাইরাস ও এর সাথে জরায়ুমুখসহ অন্যান্য ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ-এর গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রোকেয়া আনোয়ার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অনকোলজি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাশেফা খাতুন।

আলোচনায় অংশ নেন ওজিএসবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম ও বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, ওআইডাব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোসাররত সৌরভ ও নারীপক্ষের প্রধান শিরিন হক।

আলোচনায় বক্তারা দু’টি বিষয়ে জোর দেন এবং এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন-

১। প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য জরুরি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, অন্যটির আমদানি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন বক্তারা।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (GAVI) এর সহযোগিতায় সম্প্রতি গাজীপুর জেলার ৩৩ হাজার কিশোরীকে বিনামূল্যে এই ভ্যাক্সিন দেয় সরকার। এই পাইলট প্রজেক্টের মূল্যায়নের পর, পর্যায়ক্রমে টিকা কার্যক্রম সারাদেশে সম্প্রসারণ করার কথা। এ বিষয়ে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

২। ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালু আছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪শ’ সরকারি হাসপাতালের ভায়া সেন্টারে। কিন্তু তা অসংগঠিত ও হাসপাতালকেন্দ্রিক। একে সমাজভিত্তিক সংগঠিত রূপ না দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এর আওতায় আনা সুদূর পরাহত। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, এটা আশার কথা।

তবে সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবি, যা হবে সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সম্পূর্ণ।

কেবল সরকার নয়, চিকিৎসকসমাজ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য অংশীজন, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্যান্সার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি সম্ভব। পুরো জানুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকার বাইরে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রচারাভিযান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এই অনুষ্ঠানে।

প্রতিবছর জানুয়ারির দ্বিতীয় শনিবার ‘মার্চ ফর মাদার’ নামের মোর্চার উদ্যোগে পালিত হয় জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস। পুরো জানুয়ারি মাসকে এবার বিশ্বে জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।