১৯৯৭ থেকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে ঢাবিতে

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩ উদযাপন প্রতি বছরের ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ১৯৯৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন করে আসছে। বিশ্বে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’।

এর ধারাবাহিকতায় সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি ও বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়।

এ বছরের জন্য প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “মানসিক স্বাস্থ্য সার্বজনীন মানবাধিকার”। দিবসটি উপলক্ষে ১০ই অক্টোবর, সকাল ১১:০০ টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে একটি স্পেশাল সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সচিব জনাব নাজমা মোবারেক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়; বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সভাপতিত্ব করেন জনাব রওশন আরা বেগম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।

সেমিনারে বক্তারা এ বছরের প্রতিপাদ্য “মানসিক স্বাস্থ্য সার্বজনীন মানবাধিকার” নিশ্চিতকরণে গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন যে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গৃহীত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা

কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তা আরো দীর্ঘ মেয়াদী করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয়ের চলমান মানসিক স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মিসেস জোবেদা খাতুন বলেন-যুব সমাজের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা দূর করার জন্যও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একান্ত প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন কুসংস্কারপূর্ণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি (Stigma) এবং বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদের মানসিক সংকটে পতিত জনগোষ্ঠীকে আরো ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলছে। পৃথিবীর সব দেশেই মানুষে মানুষে এরূপ নানা ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণই সরাসরি প্রভাব ফেলছে তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।

যেহেতু বাংলাদেশে বিশাল তরুণ সমাজ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুসংস্কার ও বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অধিকার সমুন্নত করতে হবে। গুণগত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা আমাদের সকলের মানবিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা উচিত।

বিশেষ অতিথি জনাব পারভেজ রহিম বলেন-মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই অপরিহার্য। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কিভাবে কমানো যায় সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং একই সাথে তিনি দীর্ঘ মেয়াদী মানসিক সেবা প্রদানে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।

আলোনায় ৯৯৯ জরুরী সেবায় নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক তার কাছে আসা ফোন কলের আত্মহত্যা বিষয়ক একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন ২০২০ সালে ৮৫৭ জন, ২০২১ সালে ১৩৮৭ জন এবং ২০২২ সালে ২৩৮৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।

এছাড়াও দিনব্যাপীক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ কর্তৃক সময় ও যুগোপযোগী কিছু কর্মশালা, ফ্রি কাউন্সেলিং ও সাইকোলজিক্যাল এসেসমেন্টসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এ ধরণের আয়োজন যেন বেশি বেশি হয় সেই প্রত্যাশা করেন।