হ্যালুসিনেশন কি ভুতের আছর?

ডা. সাঈদ এনাম, আত্মহত্যার চিন্তা,

ডা. সাঈদ এনাম

গভীর রাত্রে শুয়ে আছেন। পড়াশোনা করছেন। নিস্তব্ধতা চারিদিকে। হঠাৎ মনে হলো, কেউ যেন আপনার নাম ধরে ডাক দিলো। চারিদিকে চেয়ে দেখলেন কেউ নেই।

আবার শুয়ে পড়লেন। খেয়াল করছেন আবার কেউ ডাকে কিনা? না, কেউ আর ডাকছে না। একটু ভয় পেয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লেন। এভাবেই ভয়ে ভয়ে রাত্রি ভোর হয়ে যায়।

এ রকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। অনেকে এসে বলেন, ও, এই ব্যাপারটির নাম হলো হ্যালুসিনেশন! অডিটরি হ্যালুসিনেশন। হ্যালুসিনেশন হলো অস্তিত্বহীন কোন কিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া।

যেমন গভীর রাত্রে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন, বিশাল এক দানব আপনার সামনে। তার এক পা আপনার সামনে, আরেক পা উত্তর মেরুতে। তারপর আপনি বেহুশ।

কিংবা ধরুন, কবরস্থান দিয়ে যাচ্ছেন। শুনলেন কোন শিশুর কান্নার আওয়াজ। ব্যাস, সেখানেই বেহুশ হয়ে পড়ে রইলেন। পরদিন থেকে আপনার কথাবার্তা, আচার-আচরণে অসংগতি।

কবিরাজ বা ভণ্ড মোল্লা আনলেন। তিনি তেল মরিচ কিংবা মন্ত্রটন্ত্র পড়ে তাবিজ-টাবিজ দিয়ে বললেন, আপনাকে কবরস্থানের ভূতে ধরেছে। কবরস্থানের সাথে আপনি বেয়াদবি করেছেন। বেয়াদবির জন্যেই এমন পরিণতি। তেল তাবিজে সেরে যাবে।

কিন্তু সারে না। বেড়েই যায় দিন দিন। আসলে এ সবই হচ্ছে হ্যালুসিনেশন। ব্রেইনের নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন, সেরোটোনিন এসবের তারতম্যেই এমন হয়।

হ্যালুসিনেশনের ধরন

হ্যালুসিনেশন অনেক রকম হয়ে থাকে। দেখায় হ্যালুসিনেশন, শোনায় হ্যালুসিনেশন, গন্ধ পাওয়ায় হ্যালুসিনেশন, স্পর্শ পাবার হ্যালুসিনেশন। যেন মনে হবে, আপনার গা বেয়ে কিংবা চামড়ার নিচ দিয়ে কিছু একটা শিরশির অনুভূতি নিয়ে উঠে যাচ্ছে।

ব্রেইনের অনেক রোগে হ্যালুসিনেশন হয়। স্কিজোফ্রেনিয়া, মুড ডিসওর্ডার, ডিমেনশিয়া, পারকিনসন, ব্রেইন/হেড ইনজুরি, ব্রেইন স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মাইগ্রেন, মৃগী রোগ। এমন কি টেনশন, হতাশা বা ঘোরতর বিষন্নতায়ও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। আবার কোন কারণ ছাড়াও জীবনে এক-দু’বার হ্যালুসিনেশন হতে পারে।

চিকিৎসা

ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার রিসেপ্টর ব্লকার খুবই কার্যকরী। যে সব ঘোরতর মানসিক রোগী বলেন, তাদের কানে আলগা আওয়াজ বা গায়েবী আওয়াজ আসে, তারা শুনতে পান তাদেরকে নিয়ে কেউ কথা বলছে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে ডোপামিন ব্লকার ব্যবহারে তাদের এই অডিটরি হ্যালুসিনেশন কমে যায়।

লেখক: ডা. সাঈদ এনাম, ডিএমসি (কে-৫২), বিসিএস (২৪); সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি; ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।