চাঁদে প্লট বিক্রির অজানা কাহিনী অজানা শঙ্কা

ডা. সাঈদ এনাম, আত্মহত্যার চিন্তা,

ডা. সাঈদ এনাম

ডেনিস এম হোপ ১৯৮০ সাল থেকে চাঁদের জমি বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত শতাধিক দেশের কয়েক লাখ খদ্দের, মক্কেল পেয়েছেন তিনি। নামমাত্র মূল্যে (দু’জনের একটি ডিনারের খরচ) তিনি চাঁদের জমি বিক্রি করছেন।

হোপ চাঁদের মালিক হলেন যেভাবে

এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। যেহেতু চাঁদের কোন মালিকানা কেউ দাবি করেননি, সুতরাং তিনিই এর মালিক। যদিও চাঁদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার মতো দেশের এ নিয়ে একটি চুক্তি রয়েছে বেশ আগে।

চুক্তিটি হলো, ‘চাঁদের সুরক্ষা সবাই করবেন। চাঁদের উপর বিশ্বের সকল দেশের সমান অধিকার। চাঁদের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করা তথা অস্ত্র বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা কখনো করা যাবে না চাঁদের বুকে’।

তথাপি ডেনিস হোপ এসবের ধার ধারেন না।

হোপের চাঁদের মালিকানা দাবির আসল কাহিনী

নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে যখন একে একে হোপের স্ত্রীসহ সবাই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তখন একদিন সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তার মাথায় এই বুদ্ধিটা এলো। চাঁদের মালিকানা নিয়ে চাঁদে জমি বিক্রির ব্যবসা করলে কেমন হয়? ব্যাস, যেই ভাবা সেই কাজ।

মালিকানাটা নিয়ে নিলেন নিজে নিজেই। একটা ওয়েব সাইট খুললেন। তারপর প্লট বিক্রির অ্যাড দিলেন ইন্টারনেট দুনিয়ায়৷মেইল পেতে থাকলেন একে একে। রং বেরংয়ের দুনিয়ায় নানান রকমের রসিক খদ্দেরের কি আর অভাব আছে?

প্লট আকারে নামমাত্র মূল্যে চাঁদ বিক্রি করতে থাকলেন সেইসব রসিক কাস্টমারের কাছে। রসিক কাস্টমার বা খদ্দেরের অভাব হয়নি, হবেও না ভবিষ্যতে। বিক্রি চলছে দেদারসে। চলবে অনন্ত কাল, বংশ পরম্পরায়।

বিজ্ঞজনের মতামত কী?

‘তুমি এভাবে চাঁদের মালিকানা দাবি করে চাঁদে প্লট বিক্রি করতে পারো না’, এমন অভিযোগ হোপ থোড়াই কেয়ার করেন। তার কথা হলো, এটা ‘আমার ইচ্ছা। চাঁদ আমার, আমি যার কাছে খুশি বিক্রি করবো। কার কী করার আছে…, আমি তো ইউনাইটেড ন্যাশনসকে আমার মালিকানা দাবি করে একটা মেইল দিয়েছি। তারা তো কোন রিপ্লাই দেয়নি। আর আজ পর্যন্ত আমার কাছে কেউ মালিকানা দাবিও করেনি। সো চাঁদ আমার’।

ডেনিস হোপকে সামালাবে কে? এমন লোক শত সহস্র বছরে জন্মায় কি-না সন্দেহ! যাক আপনারা চাঁদে জমি কিনেন আপনাদের ইচ্ছে মতো। কারো সমস্যা নেই। আমি ভাবছি অন্য বিষয়।

ভবিষ্যতে হোপ যদি তার বিক্রয়কৃত চাঁদের প্লটের বছর বছর খাজনা দাবি করে বসেন, তাহলে কী হবে? যদি করেন, তবে তার খদ্দের বা মক্কেলদের আরো কিছু বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। হয়তো সেসব রসিক মক্কেলদের আরো কিছু ডলার ‘আক্কেল সেলামি’ হিসেবে খসতে পারে।

শুধু তাই নয়, খাজনা সঠিক সময়ে ঠিকমতো আদায় না করলে জরিমানাসহ মামলা টামলায় ফাঁসাতে পারেন ডেনিস হোপ। কারণ ‘সাবধানের মার নেই’ বলে একটা প্রচলিত কথা আছে।

সো, খদ্দের বা মক্কেল ‘খটাই-মজর’কে (সিলেটি ভাষায় বোকা লোকদের খটাই-মজর বলা হয়) বলছি, আপনারা একটু রয়ে সরে চাঁদে জমি কিনেন। বিপদ-আপদ আসতে সময় লাগে না।

উল্লেখ্য যে, গ্রহ উপগ্রহের মালিকানা দাবি করে আমেরিকান নাগরিক ডেনিস হোপ কেবল চাঁদই বিক্রি করে গায়েব করে দিচ্ছেন এমন নয়! তিনি মঙ্গল গ্রহ, এমনকি বৃহস্পতি গ্রহকেও নিজের মালিকানা দাবি করে একই কায়দায় প্লট আকারে বিক্রি করে পকেট কেটে যাচ্ছেন অনেক খটাই-মজরদের। আর হয়ে যাচ্ছেন রাতারাতি বিনে পুঁজিতে ‘ইলন মাস্ক’।

লেখক: সাইকিয়াট্রিস্ট; সহকারী অধ্যাপক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ; ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন; ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট, ইংল্যান্ড